শিরোনাম :

  • শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

রাজশাহী পলিটেকনিক অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলল ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পাসের পুকুরে ফেলে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে অধ্যক্ষ মসজিদে নামাজ পড়ে নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে ধরে নিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। পরে তিনি সাঁতরে কিনারে এলে আশপাশের কয়েকজন তাকে পুকুর থেকে উদ্ধার করেন। অধ্যক্ষ জানান, সাঁতার জানায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন, নইলে আজই হয়তো পানিতে ডুবে মারা যেতেন। এ ঘটনার পর থেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অধ্যক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কম্পিউটার বিভাগের শেষপর্বের ছাত্র সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী অধ্যক্ষের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করে। এ সময় তারা দু’জন শিক্ষার্থী যারা নিয়মিত ক্লাস করেনি এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানায়।

অধ্যক্ষ তাদের কথা শুনে বলেন, কারিগরি শিক্ষায় ৭৫ ভাগ ক্লাস না করলে এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায় অংশ না নিলে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। অধ্যক্ষ তাদের কথায় রাজি না হয়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অধ্যক্ষের কথা শুনে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দলীয় টেন্টে গিয়ে জড়ো হয়।
বেলা দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজ কার্যালয়ে ফেরার সময় কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী অধ্যক্ষকে রাস্তা থেকে তুলে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। অধ্যক্ষ সাঁতার কেটে কিনারে এলে আশপাশের কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে।
ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কামাল হোসেন সৌরভ কম্পিউটার বিভাগের শেষপর্বের ছাত্র এবং পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর আগে দুটি পরীক্ষায় রেফার্ড পেয়েছে সে।

অধ্যক্ষ বলেন, কিছু ছাত্র নিয়মিত ক্লাস করে না এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায়ও অংশ নেয় না। অথচ তাদের অভিভাবকরা জানে তাদের সন্তানরা নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আমার সাথে দেখা করতে আসা ছাত্রদের আমি বলেছিলাম, যাদের ক্লাস এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা আছে, তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এলে তাদের ফরম ফিলাপের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু তারা আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্যই পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। পুকুরে বাঁশ পোঁতা ছিল। আমি ধারালো সেই বাঁশে পড়ে গেলে কিংবা সাঁতার না জানলে আজ হয়তো মরেই যেতাম।

রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ রহমান এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার সময় শহরের বাইরে ছিলেন দাবি করে রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন বলেন, মোবাইল ফোনে ঘটনা শোনার পরপরই আমি দলীয় নেতাকর্মীদের অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারা গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা অধ্যক্ষকে বলেছি। আর সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এবং তদন্তসাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযুক্ত কামাল হোসেন সৌরভ তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত- এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিগেন বলেন, আমি যেহেতু পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সেখানকার ছাত্রলীগের এ থেকে জেড পর্যন্ত সব নেতাকর্মীই আমার ঘনিষ্ঠ।
চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: গোলাম মোস্তফা জানান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।