এবি পার্টির ইফতারে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের সম্মেলন
চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাড়াবে ৪০ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে তেলের দাম কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রোববার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৫-১৬ প্রথম অন্তর্বতীকালীন পর্যালোচনা’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
সংবাদ সম্মেলনে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডি’র গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, তেলের দাম ১০ শতাংশ কমানো হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। মূল্যস্ফীতি কমবে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩০ বছর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ব্যাপক লোকসানের মধ্যে ছিল। দীর্ঘদিন লোকসানে থেকে গত বছর তারা ৫ হাজার ২ কোটি টাকা লাভ করেছে। এবছর বিপিসি’র ১১ হাজার কোটি টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে সিপিডি’র ২০১৫-১৬ প্রথম অন্তর্বতীকালীন পর্যালোচনায় উঠে আসে, চলতি অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, আমদানি বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের দাম কম, সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা (ইনসেনটিভ) ঘোষণায় রাজস্ব আদায় কম এবং ট্যাক্স আইনের বাস্তবায়ন না হওয়॥
২০১৫-১৬ প্রথম অন্তর্বতীকালীন পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২৬টি বড় প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি প্রকল্প গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তাই আগামী ৬ মাসের মধ্যে ৫ থেকে ৬টি প্রকল্প শেষ করার জন্য প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হলে প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিপিডির গবেষক তৌকিকুল বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার মাত্র ১৪ শতাংশ এতোদিনে সমাপ্ত হয়েছে। এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হলে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এজন্য ট্রাস্কফোর্স গঠন করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত ৫ মাসে পরিস্থিতি উদ্বেগ না থাকলেও দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধন কমেছে। রাজস্ব আদায় কাঠামো দুর্বল হয়েছে। আইপিও কমে গেছে। এছাড়া বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম কম এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার পরও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই বলা যায় দেশে স্থিশীলতা আছে; চাঞ্চল্যতা নেই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এগুলো ভারসাম্যপূর্ণ একটি পলিসি তৈরি করতে হবে। এছাড়া ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেশ অয়েলের দামও কমানো প্রয়োজন।
সিপিডি গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের দেশের ভেতরে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছেন। এভাবে দেশের বাইরে অর্থ চলে গেলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এজন্য বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বেনামি সম্পদ ঘোষণা আইন’ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের বাইরে কে কোথায় বিনিয়োগ করছে তার তথ্য নেই সরকারের কাছে। এ আইনের বাস্তবায়ন হলে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ড. সুদীপ কান্তি বৈরাগী প্রমুখ।