রাষ্ট্রপতি চুপ্পু অন্তর্বর্তী সরকারে পছন্দের লোক দিতে চান
এম আবদুল্লাহ ।।
অন্তর্বর্তী সরকারে পছন্দের লোক দিতে চান আওয়ামী লীগের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি অন্ততঃ দু’জনকে মনোনীত করতে চাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক দলগুলো এটা মানতে চাইছে না। তেবে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত ড. মুহাম্মদ ইউনুস দেশে ফেরার পর। ফলে আসন্ন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
১৫ সদস্য কিংবা তারও বেশি সংখ্যক সদস্য নিয়ে এ উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হতে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে বলে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারে অন্য কারা থাকছেন, সে ব্যাপারে সঠিকভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন নামের তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৫ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। ড. ইউনূস আজ দেশে ফেরার পর তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে তালিকাটি চূড়ান্ত হবে। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে তালিকার বিষয়ে কথা বলেছেন।
বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র মাহফুজ আলম গতকাল রাতে বলেন, সমন্বিত রূপরেখা আজ ঘোষণা করা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। কারা কারা থাকতে পারেন, কতজন থাকতে পারেন-এসব নিয়ে আলোচনা চলছে৷ কোন রূপরেখা ও কাজের ভিত্তিতে দপ্তর ভাগ হবে, কী হবে না হবে, সেটি আজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসার পর তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
লিয়াজোঁ কমিটির আরেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র নাসীর আবদুল্লাহ বলেন, ‘লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকে বিভিন্ন নাম দিয়েছেন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কেমন দেখতে চায়, কীভাবে চায়, কীভাবে হলে ভালো হয়, রাজনৈতিক শূন্যতা থেকে উত্তরণ কীভাবে ঘটানো যায়-এসব বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থা রেখেছে।’
অনেক নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাঁদের দুজন প্রতিনিধি রাখতে চাইছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও একজন বা দুজনের নাম দিতে চান। তবে রাষ্ট্রপতি কেন তাঁর পছন্দের লোক দেবেন, এ নিয়ে বিভিন্ন দলের প্রশ্ন রয়েছে।
দলগুলোও নাম দিতে চায়
ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাঁদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলগুলো তাঁদের কাছেও পছন্দের কিছু নাম দিয়েছে। দলগুলো সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের নাম দিতে চাইছে।
বিভিন্ন দলের নেতারা অভিযোগ করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য সদস্যদের মনোনীত করার আগে রাষ্ট্রপতি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আলোচনার ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। বিএনপি নেতারা বলছেন, আলোচনার জন্য তাঁদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার পরিচালনার জন্য তাঁর নিজেরও কিছু পছন্দ থাকতে পারে। আজ দেশে ফেরার পর তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারের অন্য সদস্যদের তালিকা চূড়ান্ত হবে।
এদিকে দেশবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় ড. ইউনূস বলেছেন, ‘কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিন দিন ধরে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। ফলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য তাগিদ দিচ্ছে।
ড. ইউনূস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তিনি গতকাল দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে। আজ বেলা ২টা ১০ মিনিটে তাঁর ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা। ফলে ড. ইউনূসের দেশে ফেরার সময় বিবেচনায় রেখে আজ রাত আটটায় বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ আজ
গতকাল সেনাসদর দপ্তরে সেনাপ্রধান সংবাদ সম্মেলনে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত ড. ইউনূসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে এবং শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়ে কথা বলেছেন। সরকারের অন্য উপদেষ্টা কারা হবেন, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি।
গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানেরা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেনাপ্রধান গতকাল তাঁর সংবাদ সম্মেলনে সেই সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরেন।