নতুন কাঠামোয় এখনো সবার বেতন মেলেনি

bangladesh_sorker-1নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের ডিসেম্বর মাসের বেতন অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী পাওয়ার কথা থাকলেও সবাই তা পাননি। জানুয়ারি মাসের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও অর্থবিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত ৪০ ভাগ কর্মচারী বেতন ওঠাতে পারেননি। এদিকে, বেতন স্বনির্ধারণী প্রক্রিয়া জটিলতায় নতুন পে-স্কেলে বেতন পাচ্ছেন না ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি। ফলে এই বিশাল সংখ্যক সরকারি চাকুরিজীবী তাদের পরিবার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

মন্ত্রীর ভাষ্যমতে, এ মাসের মধ্যে শতভাগ কর্মচারী নতুন বেতন কাঠামোয় বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে যখন জানুয়ারির যে বেতন ওঠাবেন, তখন শতভাগ কর্মচারীই নতুন কাঠামো অনুযায়ী তা পাবেন।

নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী শতভাগ কর্মচারী বেতন ভাতা না পাওয়ার জন্য মহা হিসাব নিরীক্ষকের (এজি) অফিসের চাপ সামলাতে না পারা এবং নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী বেতন-ভাতা নিরূপণে কারিগরি সমস্যাকে দায়ী করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘টেকনিক্যাল কিছু কারণে এ মাসে শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা নাও পেতে পারেন। তবে আমার ধারণা শতকরা নব্বইভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী চলতি মাসেই বেতন-ভাতা পাবেন। আগামী মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের বেতন শতভাগ নিশ্চিত হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও বিভিন্ন কার্যালয় মিলে ১২ লাখের ওপর কর্মচারী রয়েছে। এদের সবার জন্যই নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদানের বিষয়ে সরকারের শতভাগ আয়োজন রয়েছে। তবে এজি অফিস এখন একযোগে সবার বেতন নিরূপণ করে চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে।

এম এ মান্নান জানান, বেতন-ভাতা উত্তোলনের জন্য এখন অনলাইন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিজের আইডি দিয়ে তাঁর জন্য নির্ধারিত পেজ খুলবেন। এখানে তিনি নিজেই নিজের বেতন নিরূপণ করে তা অনলাইনে এজি অফিসে পাঠাবেন। এজি অফিস তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থ বিভাগে পাঠাবেন। এটা করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ কিছু তথ্য সংযোজন করতে হয়। অনেকেরই পরিচয়পত্র নেই, থাকলেও ভুলত্রুটি রয়েছে। এগুলো ঠিক করতে তাঁরা সময় নিচ্ছেন। ফলে তাঁরা তাঁদের বেতন নিরূপণ করতে পারছেন না। তবে আগামী মাসের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে কয়েকটি ক্যাডার ও রাষ্টায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এদের বেশির ভাগই নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী নিজেদের বেতন নিরূপণ (অ্যাসেসমেন্ট) করে এজি অফিসে পাঠায়নি। ফলে এদের বেশির ভাগই নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না।

নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে তিনি বসেছেনও। খুব শিগগিরই এর সন্তোষজনক সমাধান হবে।

বেতন পাচ্ছেন না ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি:
বেতন স্বনির্ধারণী প্রক্রিয়া জটিলতায় নতুন পে-স্কেলে বেতন পাচ্ছেন না ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি। ফলে এই বিশাল সংখ্যক সরকারি চাকুরিজীবী তাদের পরিবার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কিংবা নতুন করে সংগ্রহ  করতে না পারলে চলমান এই সংকটের সমাধানের কোন সুযোগও আপাতত নেই। তাই নতুন স্কেলে বর্ধিত বেতন আগামী চার মাসের মধ্যে পাওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্কেলে বেতন না পেলেও সরকারি এই কর্মকর্তা কর্মচারিরা আগের পুরাতন নিয়মেই বেতন পাবেন। সেক্ষেত্রে তারা নতুন স্কেলের বর্ধিত বেতন পাবেন না। স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে পরের মাসগুলোতে এই বেতনের টাকা সমন্বয় করা হবে।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত প্রায় ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছে। তাদের মধ্যে অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারি ডিসেম্বর মাস ছাড়াও দুই মাসের বকেয়াসহ  বেতন পেয়েছেন, আবার কেউ পেয়েছেন শুধু একমাসের বেতন। তবে পে-ফিক্সেশন (বেতন স্বনির্ধারণী) সংক্রান্ত জটিলতায় চলতি মাসে নতুন স্কেলে বেতন পাচ্ছেন না প্রায় ছয় লাখ সরকারি চাকরিজীবী। অনলাইনে বেতন নির্ধারণ ফরম পূরণ না করতে পারায় এমনটি ঘটেছে। নতুন স্কেলে বেতন পাননি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

এ পর্যন্ত ছয় লাখের কিছু বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করেছেন। বাকি রয়েছেন আরো প্রায় ছয় লাখ। এ ছয় লাখ চাকরিজীবীই নতুন স্কেলে বেতন পাচ্ছেন না। তবে অনলাইনে ফিক্সেশন করার পর পরবর্তী মাসে বকেয়াসহ বেতন পাবেন তারা, অর্থমন্ত্রণালয় একথা বলছে।

সূত্র আরো জানায়, অনলাইনে বেতন নির্ধারণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ, দফতর ও পদবি-সংক্রান্ত তথ্যাবলি ও জন্মতারিখ প্রয়োজন হয়। এছাড়া প্রয়োজন হয় ৩০ জুন ২০১৫ তারিখের গ্রেড/বেতন ও গৃহীত মূল বেতন-সম্পর্কিত তথ্য। এসব তথ্য ও কাগজপত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি থাকলে তা সমাধানের পর ফরম পূরণ করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব তথ্য দিয়ে অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক সরকারি চাকরিজীবী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি চাকরিজীবীদের। নিজস্ব কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ও প্রিন্টার না থাকায় তারা অনলাইনে ফরম পূরণ করতে পারছেন না। প্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন কম্পিউটার সেন্টারে ধরনা দিতে হচ্ছে অনেককেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যের ভুলভ্রান্ত্রির কারণেও অনেকে ফরম পূরণ করতে পারছেন না।

জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা এবং এ সংক্রান্ত ত্রুটির কারণেও অনেকে অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। পরিচয়পত্র হারানোর কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেককে। জন্মতারিখ মনে না থাকায় ফরম পূরণ করতে পারছেন না কোনো কোনো সরকারি চাকরিজীবী। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট হিসাব অফিসে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

গত মাসের বেতন না পাওয়া ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমস্যা নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোসলিম চৌধুরী  এ প্রতিবেদককে জানান,  বেতন বন্ধ নেই। বেতন সবাই পাবেন, তবে যারা স্বনির্ধারণী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি তারা বেতন পাবেন পুরাতন স্কেলে। পরের মাসগুলোতে তাদের বেতন নতুন স্কেলের সাথে সমন্বয় করা হবে।

বেতন স্বনির্ধারণীর নতুন এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অর্থমন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে গত অক্টোবর মাসেই সার্কুলার জারি করে সবাইকে তাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড সংশোধন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে এ জন্য পৃথক একটি বুথও চালু করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তখন এটা করেননি। এখন বেতন প্রাপ্তিতে জটিলতা হওয়াতে সবাই সতর্ক হয়েছেন। তিনি আরো  বলেন, অনেক কর্মকর্তা কর্মচারি ইচ্ছা করেই কাগজপত্র জমা দেননি। তারাও নতুন স্কেলে বেতন পাচ্ছেন না।

উল্লেখ্য অর্থ মন্ত্রণালয় গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে পে-স্কেল ফিক্সেশন চালু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email