৮০০ কোটি টাকা লোপাটে বিবি কর্মকর্তাদের ঘিরে সন্দেহ

008_নিউজ ডেস্ক : কীভাবে লোপাট হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা। নানা প্রশ্ন। কারা জড়িত এতে। সন্দেহের তীর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দিকে। তাদের কোনো না কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়া ৮০০ কোটি টাকা হ্যাকিং সম্ভব ছিল না বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন, এত বড় ঘটনা কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া হতে পারে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ওদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অর্থ চুরি হয়েছে। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এক বিবৃতিতে এ বক্তব্য নাকচ করেছে। ব্যাংকটি বলছে, তাদের ওখান থেকে কোন অর্থ খোয়া যায়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, ব্যাংকটির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

সামগ্রিক বিষয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এ ধরনের হ্যাকিং বাংলাদেশের জন্য নতুন হলেও পৃথিবীর জন্য পুরনো। এখানে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি ছিল কি-না, যন্ত্রে নতুনত্ব আনা দরকার কিনা সব কিছু পর্যালোচনায় আনা দরকার। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যে দাবি করেছে-তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়নি এ বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, ফেডারেল ব্যাংক নিজেই জানিয়েছে হ্যাকিংয়ের খবর। এমন কি তারা তদন্তেও সম্পৃক্ত। সুতরাং তাদের অস্বীকার করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র দাবি করছে, ইতিমধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্ধ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন কর্মকর্তা কাজ করেন। শুধু একটি বিজ্ঞপ্তি ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক মুখ না খোলায় পুরো বিষয়টি এক ধরনের ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিষ্কার করা উচিত। সবার আগে স্বাধীন ও শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করা দরকার। যদি কোন কর্মকর্তা সম্পৃক্ত থাকে তবে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পুরো বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশার জাল থেকে বের হতে পারেনি। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর (ডিজি-১) আবুল কাসেম বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, নো কমেন্ট। ফেডারেল ব্যাংকের দাবি মিডিয়ার খবর। তদন্ত শেষের আগে কিছু বলা যাবে না।

এদিকে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় শঙ্কায় রয়েছেন ব্যাংকাররা। বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, এক ধরনের ঘটনায় শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেলাম। যদিও এসব হ্যাকিং দুনিয়ার জন্য পুরনো। অনেক আগ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হ্যাকিং হয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। এতে আমরা সামলে নিলেও গ্রাহকরা ভয় পেয়ে যাবেন। তিনি আরও একটি আশঙ্কার কথা জানান। তাহলো- উন্নত প্রযুক্তির মেশিন যারা সরবরাহ করেন (তাদেরকে ভেন্ডর বলা হয়) তারা এখন উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহের নামে নতুন করে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, একেকটি ঘটনা নতুন নতুন এবং অচেনা সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছে। এভাবে চললে ব্যাংক শিল্পের কি হবে তা বলা মুশকিল। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, হ্যাংকিংয়ের ঘটনা নিশ্চিতভাবে উদ্বেগ তৈরি করে। চিন্তা বাড়ায়। কিন্তু থেমে থাকা যাবে না। প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে হবে, নিচ্ছি। প্রযুক্তির উৎকর্ষের পাশাপাশি দুর্ঘটনা মোকাবিলার শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ফজলে রশিদ বলেন, কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত। কারণ এতদিন কমার্শিয়াল ব্যাংক আক্রান্ত হয়েছে। এখন খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাই আক্রান্ত হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার পাশাপাশি দ্রুত সমাধান খুঁজতে হবে বলে জানান তিনি।

‘রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অর্থ খোয়া যায়নি’
নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অর্থ খোয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি। দ্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে একাউন্ট রয়েছে তা হ্যাক হওয়ার কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই। এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক একটি বিবৃতি দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে তাদের যে একাউন্ট রয়েছে তা হ্যাক হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ খোয়া গেছে। এর জবাবে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। ফেডারেল সিস্টেমে দুর্নীতিরও কোনো প্রমাণ নেই। নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ কি বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখবে- এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান ওই মুখপাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন প্রতিনিধির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা হবে: অর্থমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রাখা রিজার্ভের টাকা ‘হ্যাকড’ করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দোষ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি নিউ ইয়র্কের রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও জানালেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক, যারা সেখানে হ্যান্ডেল করেন তাদের কোনো গোলমাল হয়েছে। যদিও তারা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, তাদের কোনো দায়িত্ব নেই, এটা হতেই পারে না।’ অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি নিউ ইয়র্কের রিজার্ভ ব্যাংক এ দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের কোনো অধিকারই নেই। আমরা তাদের কাছে টাকা রেখেছি।’ কী ব্যবস্থা নেবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মামলা করবো।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি ও শুনেছি তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার আগেই লেনদেনটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। তাই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক কোনোভাবে তাদের দায় এড়াতে পারে না।’ সোমবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। জানা গেছে, ওই বক্তব্যের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email