• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ্বব্যাংকের ৪৮০০ কোটি টাকার ঋণ বাতিলের আশংকা

worldbank_25016দেশনিউজ.নেট প্রতিবেদক: ত্রুটিপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) কারণে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে গৃহীত প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে না একনেক। কিন্তু রিভার ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা আছে ৫ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রায় ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা ঋণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও অনুমোদন না হওয়ায় প্রতিশ্রুত এই ঋণ বাতিলের আশংকা দেখা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদনের বর্তমান অবস্থা ২৪ মে’র মধ্যে  জানাতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তের এ ঋণ হাতছাড়া হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইআরডি ও বিশ্বব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে একনেক বৈঠকে নদী ড্রেজিং অংশ বাড়ানো, প্রতি বছর নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রমে জোর এবং প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয় কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুশাসন দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সেসব অনুশাসন যথাযথ অনুসরণ না করায় আটকে আছে প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কিছু করার নেই। একনেকের অনুশাসন পূরণ করে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) যখন আসবে তখন কমিশন কাজ শুরু করবে। এর বেশি কিছু বলার নেই।
সূত্র জানায়, ১৫ মে ইআরডি থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু একনেকে অনুমোদিত না হওয়ায় এবং ওই বছরের ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভার নির্দেশনাগুলো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সময় চেয়ে ওই বোর্ড সভা বাতিলে ইআরডি বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুরোধ করে। পরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেরি হওয়ায় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এ প্রকল্পের অর্থ অন্য যেকোনো কার্যক্রমে স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে বারবার জানতে চাওয়া হচ্ছে প্রকল্পটি অনুমোদন হবে কিনা। তারা আর কত অপেক্ষা করবে। শেষ পর্যন্ত এই ঋণ বাতিল হতে পারে। সুদ হার বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ৬ গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধের সুযোগ থাকা সহজ শর্তের এ ঋণ বাতিল হলে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সূত্র জানায়, ১০ মে বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে ইআরডিকে চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে ঋণ বাতিল বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা না হলেও ওই চিঠির উত্তরের পরই ঋণের প্রতিশ্রুতি বাতিল করা হতে পারে বলে মনে করছে ইআরডি।
প্রকল্পটি প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব বলেন, একনেক অনুমোদন ছাড়া এই ঋণ প্রস্তাবটি বিশ্বব্যাংক বোর্ডে পাঠানো যাচ্ছে না। কেননা, বোর্ডে অনুমোদন হলেও দেখা যাবে একনেক অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হবে। সেক্ষেত্রে আগে একনেক অনুমোদন দিলে ভালো হয়। তবে বাতিল বা অন্য কোনো বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দিকে অনুমোদনের জন্য একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হয় রিভার ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম-১ প্রকল্পটি। সেদিন অনুমোদন না দিয়ে কিছু বিষয় সংশোধনীর জন্য মন্ত্রণালয়য়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
Print Friendly, PDF & Email