• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ইয়েস উচ্চাভিলাষী, বাট আই অ্যাম কনফিডেন্ট

2016_06_03_19_00_44_5fTiRWhAMI8r247rxUuwzUARpzzd9m_originalঢাকা, দেশনিউজ.নেট: রাজস্ব আদায় নিম্নমুখি হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ার কারণে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি রাজস্ব আদায়ে উচ্চাভিলাষের কথা স্বীকার করে জোর দিয়ে বলেন যে, এই সুযোগ নিতে তিনি বদ্ধ পরিকর।

শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মুহিত বলেন, ইয়েস, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী। আই অ্যাম কনফিডেন্ট টু টেক দ্য অপরচুনিটি।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের আমরা রাজস্ব আদায়ে কিছুটা নিম্নমুখি। তবে তার আগের বছরে আমরা বেশ ভালো রাজস্ব আদায় করেছি। গত সাত বছরের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা অনেক বেড়েছ। উপজেলা পর্যায়ে অফিস করেছি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাই আগামী বছরে আমরা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ৯৬টি উপজেলায় কর অফিস হয়েছে। এটা প্রতিটি উপজেলায় হবে। অনেক নতুন নতুন এখানে কাজ করছে। সে জন্যই আমি ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর আদায়ের প্রস্তাব করেছি।

গত বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক আদায় হয়েছে ৯ মাসে। রাজস্ব ব্যয়ও সেই অনুপাতে কমেছে। মার্চ পর্যন্ত মোট ব্যয় (এডিপি) হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা, মাত্র ০.৩%। সংশোধিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়ছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে হবে ৮৭ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা, মানে ০.৩% থেকে বেড়ে হয়েছে ৫%। এই পুরো আদায় এবং খরচ হবে বাকি ৩ মাসে (২০১৫-১৬ অর্থবছর)।

এ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পরিমাণ ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ঘাটতি ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ শতাংশ। সরকার এ ঘাটতি বাজেট মেটাতে গিয়ে ব্যাংক উৎস হতে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থাকলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ হারে বেড়েছে।

জেলা বাজেট বাদ দেয়া হলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা বাজেটের উদ্দেশ্য ছিল টু অ্যাসেস একটা জেলায় কতটা কাজ করছি। জেলাগুলোকে ইউনিট ধরনের সেবা সেখানে যায় সেটা বের করা। অদূর ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন আনতে হবে। বাজেট বাস্তবায়ন হবে জেলা পর্যায়ে। এজন্য জেলা বাজেট একটা টেস্ট ছিল, সেটা আমরা শেষ করেছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একেকটি জেলা একেকটি দেশের সমান। জেলায় এমন অবস্থান তৈরি করতে হবে যাতে জেলাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। জেলা পরিকল্পনা করবে, বাস্তবায়ন করবে। কেন্দ্রীয় সরকার রেখে এটা করা যাবে। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার কীভাবে করবেন।’

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘তেলের দাম কিছুটা কমিয়েছি, এটা চলমান। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে কিছুটা উপদেশ দিয়েছি। আর যেহেতু সেটা আলাদা মন্ত্রণালয়, দামের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।’

তিনি বলেন, ‘তেলের দাম কিন্তু আবার ৫০ ডলারে পৌঁছেছে। সে জন্য তেলের দাম আকস্মিকভাবে নামলে তা সাবধানতার সাথে পর্যালোচনা করা উচিত।’

অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে এক প্রশ্নে মুহিত বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত আইন আছে যেটাতে স্টেটমেন্ট কিছু ফাইন দিয়ে রিভাইস করা যায়। এটা থাকবে। তাই কালো টাকা নিয়ে আমি চুপ আছি এর কোনো মানে হয় না। এ সরকার যতদিন থাকবে; ততদিন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ উঠছে না। এ সুযোগ বলবৎ থাকবে। যে কোনো কালো টাকা জরিমানা দিয়ে বৈধ করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত আছেন, যাদের জন্য পেনশন সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে, ব্যক্তিখাতের ৯৫ শতাংশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত প্রায় ৮ শতাংশের কিছু অংশ গ্রাচ্যুইটি সুবিধা পেলেও বাকিদের জন্য কোন পেনশন বা গ্রাচ্যুইটি নেই। এ প্রেক্ষাপটে সকল শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীসহ প্রবীণদের জন্য একটি সার্বজনীন ও টেকসই পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি।’

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email