শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

করোনায় বাংলাদেশে গভীর সামাজিক বৈষম্য, কারও দ্রুত চিকিৎসা কেউ বঞ্চিত

নিউজ ডেস্ক |

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে গভীর সামাজিক বৈষম্য স্পষ্ট হয়েছে। এখানে করোনায় আক্রান্ত হলে কেউ কেউ দ্রুত উন্নত চিকিৎসা পেলেও বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ তা পাচ্ছেন না। লন্ডনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। করোনা মহামারী দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তুলে ধরেছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে উদাহরণ দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় হেলিকপ্টার থেকে নামার পরই কামরানকে স্বাগত জানায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ছোট একটি দল। দ্রুত তাকে দেশের প্রিমিয়ার স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনই এ ধরনের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার আশা করতে পারেন। আর মাত্র কয়েক মাইল দূরেই সবচেয়ে কম সৌভাগ্যবানদের চিকিৎসার জন্য গরমের মধ্যে ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা যায়। মহামারীর আঘাত ১৭ কোটি জনসংখ্যার ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফাটলগুলো যেন স্পষ্ট করে দিয়েছে। লকডাউন ও অপর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কারণে কয়েক লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

১১ জুন প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইরে অবস্থানের সময় মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হটস্পটগুলোতে স্থানীয়ভাবে লকডাউন চালুর পরিকল্পনার ঘোষণাও দিয়েছে সরকার। তবে দেশটিতে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষাও কম।

বাংলাদেশি জনস্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা এমিনেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. শামীন তালুকদার জানান, প্রতিদিন মাত্র ১০ হাজার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। যদিও কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত হাসপাতালের বাইরে আরও কয়েক হাজার মানুষের লাইন রয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতি পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করলে গড়ে এক জনের কোভিড পজিটিভ পাওয়া যায়। ঢাকার বাইরে কোভিড-১৯ পরীক্ষার মান এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই। প্রচুর ফলস নেগেটিভ আসছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে পারলে সরকারি তালিকায় মৃতের সংখ্যাও বাড়বে। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক জানান, স্বাভাবিক সময়ের চাইতে গত দুই মাসে প্রায় দ্বিগুণ কবর খনন করা হয়েছে। আগে বনানী কবরস্থানে দিনে একটি বা দুটি মরদেহ কবর দেয়া হলেও গত মাস থেকে প্রতিদিন এখানে গড়ে পাঁচটির মতো কবর দেয়া হয়।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থান। সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক জানান, মে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন কোভিড রোগীকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কোভিডে মারা যাননি এমন মৃতদেহের সংখ্যা আগের তুলনায় এখন দিনে গড়ে ১০টি বেড়েছে।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরেও ধাক্কা আসতে শুরু করেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় জিডিপির এক শতাংশেরও কম।

তিনি বলেন, এখানে একটা ফাঁকা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। চকচকে হাসপাতাল কখনও কখনও সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডের ভবনের মতো দেখালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেতরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী।