ওয়াশিংটন-আঙ্কারা বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু

130294_Misbah-2নিউজ ডেস্কঃ তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর পূর্ব নির্ধারিত শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। অপ্রত্যাশিত এই শুল্ক আরোপের ফলে তীব্র বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তুরস্কের অর্থনীতি। ডলারের বিপরীতে তুর্কী মুদ্রা লিরার মান এক রাতেই ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতি কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে তুরস্কের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সামরিক জোট ন্যাটোর প্রভাবশালী দুই সদস্য তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার শুরু তুরস্কে বসবাসকারী এক মার্কিন যাজককে নিয়ে। সম্প্রতি সরকার-বিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই যাজককে আটক করেছে তুরস্ক। পরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি তার মুক্তি দাবি করা হয়। প্রাথমিক অনুরোধ কাজে না আসায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক প¤েপও তুরস্ককে এক প্রকার হুমকিই দিয়ে বসেন। কিন্তু কোন অনুরোধ বা হুমকি তুরস্ককে নমনীয় করতে পারে নি। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে ওই যাজককে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায় তুরস্ক। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। তুরস্কের প্রভাবশালী দু’জন মন্ত্রীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাল্টা জবাবে এরদোগান আঙ্কারার মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত দু’জন কর্মকর্তার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতেও নমনীয় হয়নি তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান তুরস্কের অর্থনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দেন। বলেন, তুর্কী অর্থনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। তিনি তুর্কী মুদ্রার সঙ্কটকে অর্থনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে রিজার্ভ সোনা ও ডলার ভাঙিয়ে তুর্কি মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। এরদোগান বলেন, ‘ডলার আমাদের পথ রুদ্ধ করতে পারবে না। কারো কাছে যদি ডলার বা সোনা জমা থাকে, তাদের উচিত স্থানীয় ব্যাংকে গিয়ে সেগুলো তুর্কী লিরায় রুপান্তর করা।’ রাইজ শহরে দেয়া এক ভাষণে সমর্থকদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেন। বলেন, তুরস্কের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা এগুলোকে পাত্তা দেবেন না। তাদের যদি ডলার থাকে, আমাদের জনগণ আছে, আমাদের প্রভু আছেন। জেনে রাখুন, আমার গতকালের চেয়ে ভালো আছি। আগামীকাল আরো ভালো থাকবো। এতে কোন সন্দেহ নেই।’
তীব্র অস্থিরতা সত্তেও গত বছর তুরস্ক ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে প্রবৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশ। তবে নতুন আরোপিত মার্কিন শুল্ক তুরস্ক কিভাবে সামাল দেয় সেটার ওপর দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নির্ভর করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক বলেছে, শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন ডব্লিউটিও এর নীতিমালার পরিপন্থি। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হামি আকসো এক বিবৃতিতে বলেন, তারা শুল্ক আরোপের প্রতিশোধ নেবে। তবে নিষেধাজ্ঞা ও বলপ্রয়োগে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে আরো অবনতি ঘটবে। আলোচনার মাধ্যমে আঙ্কারা এই সঙ্কটের কূটনৈতিক সমাধান চায়।

Print Friendly, PDF & Email