ফ্যাসিস্টবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে – সালাহউদ্দিন
আমরা জবাব দিতে তৈরি: চীনকে মোদী
দেশনিউজ ডেস্ক।
ভারতের সেনারা ‘মারতে মারতে মরে হ্যায়’। তাঁদের এই বলিদান ব্যর্থ হবে না। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর ৪০ ঘণ্টা পরে এ ভাবেই মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্য, ‘ভারত শান্তি চায়। কিন্তু প্ররোচিত করা হলে উপযুক্ত জবাব দিতেও আমরা তৈরি।’
একই সুরে সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নরবণে বলেছেন, ‘লাদাখে ২০ জন জওয়ানের বলিদান ব্যর্থ হবে না।’ আর বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর আজ চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-কে ফোন করে অভিযোগ করেছেন, লাদাখে পরিকল্পনামাফিক হামলা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধীদের চাপের মুখে মোদী সরকার সুর চড়ালেও বাস্তবে কি তাদের সামনে বদলা নেওয়ার কোনও পথ খোলা আছে?
সোমবার রাতের সংঘর্ষে আহত ভারতীয় সেনার সংখ্যা প্রায় দেড়শো। তাঁদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কয়েক জন সেনা এখনও নিখোঁজ বলে শোনা গেলেও বাহিনীর পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হয়নি।
সূত্রের মতে, নিহত ২০ জন সেনার অধিকাংশের মাথায় চোট ছিল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শরীর ছিল ক্ষতবিক্ষত। তীব্র ঠান্ডায় আহত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার ফলে অনেকেই হাইপোথার্মিয়ায় মারা যান।
গত কাল সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই সংঘর্ষে ৪৩ জন চিনা সেনা হতাহত হয়েছেন বলে জানালেও আজও এ নিয়ে রা কাড়েনি বেজিং। তাদের অবস্থান বদলের কোনও ইঙ্গিতও এখন পর্যন্ত নেই। চিনা সৈন্য এখন পূর্ব লাদাখ সীমান্তে ভারতীয় ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে বসে রয়েছে। গালওয়ান উপত্যকার যে এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়, তা ভারতীয় সীমানার অন্তর্গত। ভারত যদি পাল্টা আগ্রাসন দেখিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে চিনের কিছু জমি আগেই দখল করে রাখত, তা হলে দর কষাকষির একটা সুযোগ দিল্লির থাকত।
কিন্তু এখন কড়া অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসাও ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, তাতে বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাবে। অন্য দিকে, পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধের জন্য মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরোদস্তুর যুদ্ধ বেধে যাওয়াটা কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়। বিশেষ করে যখন ভারতের সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলির কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই বিপুল সেনা সমাবেশ করতে শুরু করেছে চিন। সতর্কতা জারি হয়েছে ভারতের তিন সামরিক বাহিনীতেও। জয়শঙ্কর যখন সোমবারের ঘটনায় দু’দেশের সম্পর্ক ধাক্কা খাবে বলে চিনকে সতর্ক করেছেন, তখন চিনা বিদেশমন্ত্রী পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, লাদাখ সীমান্তে ভারত যেন সামরিক শক্তি প্রদর্শন না-করে।
এই পরিস্থিতিতে আলোচনাই একমাত্র রাস্তা বলে মত কূটনীতিকদের। দু’পক্ষের সংঘর্ষের পরে আজকের সামরিক পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। প্রথমে তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক হয়। যদিও সমাধান সূত্র অধরাই। যার অর্থ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে এসে চিনের সেনা যেমন ভারতের মাটিতে বসে ছিল, তেমনই থাকবে। উল্টে তারা নিজেদের অবস্থান যে আরও মজবুত করবে, আজ সেই ইঙ্গিতও মিলেছে। মে মাসের আগে থেকেই লাদাখে বাঙ্কার গড়ে, কামান বসিয়ে তৈরি হয়েছিল চিনা সেনা। সোমবারের সংঘর্ষের পরে উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, কয়েকশো সাঁজোয়া গাড়ি লাদাখের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। গালওয়ান ছাড়াও এই মুহূর্তে প্যাংগং হ্রদ, ডেমচক ও দৌলত বাগ ওল্ডি এলাকায় মুখোমুখি রয়েছে দু’দেশের সেনা।
চিনের এহেন আগ্রাসন এবং আক্রমণ সত্ত্বেও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব নীরব কেন, তা নিয়ে আজ সকাল থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেই চাপ সামাল দিতে প্রথমে ১৯ তারিখ সর্বদল বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর সংঘর্ষের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরে প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খোলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কিন্তু বক্তব্যের কোথাও চিনের নাম পর্যন্ত নেননি তিনি। আরও চার ঘণ্টা পরে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনিও চিন সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব! আজ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত বরাবর প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। লক্ষ্য থাকে, মতভেদ যাতে মতান্তরে, মতপার্থক্য যাতে বিবাদে পরিণত না-হয়। দেশের জন্য গর্বের কথা হল, আমাদের সেনারা মারতে মারতে মৃত্যুবরণ করেছেন।’’ এর পর ‘ওম শান্তি’ বলে দু’মিনিট নীরবতা পালন করেন তিনি ও মুখ্যমন্ত্রীরা। রাতে লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী।
চিন অবশ্য লাদাখে সংঘর্ষের দায় সরাসরিই ভারতের উপরে চাপিয়েছে। আজ সকালে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন দাবি করেন, গালওয়ান উপত্যকা চিনের। ভারতীয় সেনা সেখানে অনুপ্রবেশ করে ঝামেলা পাকিয়েছে। এর পরে বিকেলে জয়শঙ্কর চিনা বিদেশমন্ত্রীকে বলেন, লাদাখ সমস্যা মেটাতে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল এবং তাতে অগ্রগতিও হয়েছিল। কিন্তু তারই মধ্যে চিন সেনা গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় জমিতে কাঠামো গড়ার চেষ্টা করে। যা থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত।
ভারত জানিয়েছে, চিন সেনার পূর্ব পরিকল্পিত পদক্ষেপই সোমবারের সংঘর্ষ ও প্রাণহানির জন্য দায়ী। যাকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চুক্তি ভাঙার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছে তারা। উল্টো দিকে চিনের বিদেশমন্ত্রী সোমবারের ঘটনায় যাঁরা (ভারতীয় সেনা) দোষী তাঁদের শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন জয়শঙ্করের কাছে। বৈঠকের পর সাউথ ব্লক জানিয়েছে, গত ৬ জুন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে শান্তি আলোচনা জারি রাখতে রাজি হয়েছে দু’দেশ। দু’পক্ষই এমন কিছু করবে না, যাতে ওই এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত হয়।
আনন্দবাজার
ডিএন/জেএএ

