শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সংবিধান পরিপন্থী কোন কাজ করতে দেওয়া হবে না: প্রধান বিচারপতির হুঁশিয়ারি

0-1মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ‘অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী’ আবারও উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আইন ও সংবিধান রক্ষায় আমাদের সংশোধিত হতে হবে। দেশে এখন গণতন্ত্র আসছে, সংবিধান আছে; এখন আমরা আইনে চলব। সেই সামরিক আইন চলবে না। আইনকে সুসম্মত রেখে চলব। আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কোনো কাজ হতে দেওয়া হবে না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ‘বার্ষিক নৈশভোজ ও সভা-২০১৬’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

অতীতে চললেও এখন থেকে অবসরে যাওয়ার পর আর কোনো বিচারপতিকে রায় লিখতে দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার পর আর কোনো রায় লিখতে দেওয়া হবে না। আমরা আজব দেশে বাস করি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিচারকরা অবসরে যাওয়ার পর আর কোনো মামলার রায় লিখতে পারেন না। আমাদের দেশে অতীতে এ রকম রায় দিলেও এখন থেকে আর এ সুযোগ দেওয়া যাবে না।’

গত মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে দেওয়া বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারপতিদের অবসরে গিয়ে রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। কোনো কোনো বিচারক রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন, আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।’

যদিও এ নিয়ে আইনজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
এক পক্ষে বলা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য সঠিক হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে রায় লেখা হয়েছে, তা অবৈধ।
অন্য পক্ষ বলছে, অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি রায় লিখতে পারেন। এ নিয়ম বহুদিন থেকে চলে আসছে।

আইনজীবীদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘আপনারা হলেন সমাজের বিবেকবান মানুষ, আইন পেশাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করবেন না। বর্তমানে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কে সভাপতি ও কে সেক্রেটারি হবেন, এটা রাজনীতিবিদরা নির্ধারণ করে দেন। এসব বিষয় আমাকে খুব বেশি পীড়া দেয়।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকদের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে আদালত বয়কট করবেন না। প্রয়োজনে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমাকে জানাবেন। আমি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে আপনারা বয়কট করবেন।’

এ সময় সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেন, অনেক বিচারপতি ছুটি পেয়ে সরকারি খরচে বিদেশ চলে যান। অথচ পাঁচ-সাত বছরেও রায় লেখেন না। তিনি বিচারপতিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দয়া করে আইন ভঙ্গ করবেন না। আপনারা যদি আইন ভঙ্গ করেন, তাহলে সাধারণ মানুষজন কী করবে?’

বক্তব্যের শুরুতে প্রধান বিচারপতি এ দেশের গণমাধ্যম অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে সংবাদকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মোছাব্বিরের সভাপতিত্বে এবং অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম জাবেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শফিকুল ইসলাম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জেলা জজ মোতাহের আলী, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, অ্যাডভোকেট শান্তিপদ ঘোষ ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।