আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
দুই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: সেই ছাত্রলীগ সভাপতির স্বীকারোক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক।
ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিস্কৃত) মো. সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (বহিস্কৃত) ইমতিয়াজ হোসেন রুবেল (৪৫) সহোদরের দুই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম আদালতে দোষস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আজ বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা স্বীকারোক্তি রেকডের জন্য আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ২১ আগস্ট গ্রেপ্তার শামীমকে পরদিন আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর কাফরুল থানায় এই মামলায় বরকত ও তার ভাই রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে স্বীকারোক্তি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে নাম আসা ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার নাজমুল হাসান লেভী, জেলা শ্রমিক লীগের অর্থ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন ও শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান গ্রেপ্তার হন। তারা রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামি বরকত ও রুবেল ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন ব্রাক্ষণকান্দা গ্রামের মৃত আব্দৃস সালাম মন্ডলের ছেলে। তারা প্রথম জীবনে ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ী মোড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা চাঁন খন্দকারের অফিসে চা-পান সরবরাহ করত। ১৯৯৪ সালে চাঁন খন্দকরের নির্দেশে এ দুই ভাই ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন খোকনকে নির্মমভাবে হত্যা করে মর্মে বরকতসহ অন্যান্যদের ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা হয়। যার মামলা নং-৪২(১১)১৯৯৪, ধারা-৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০০২ সালের পর বরকত ও রুবেল তাদের গুন্ডাবাহিনী নিয়ে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা ব্যাপকভাবে শুরু করে।
মামলায় বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তৎকালীন সময়ে তাদের কোনো ধরনের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না মর্মে জানা যায়। ২০০৮ সাল থেকে বরকত ও রুবেল সহোদর ফরিদপুর জেলার এলজিইডি, বিআরটিএ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী তারা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের লোকজন দিয়ে পরিচালনা করে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে আসছে। একই সঙ্গে তারা ভূমি দখল, টেন্ডার ও পরিবহন সেক্টরের ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে। এছাড়া মাদকব্যবসায় তাদের মনোনিত লোকজন দিয়ে পরিচালনা করে প্রচুর অঙ্কের টাকা অবৈধভাবে অর্জন করে।
মামলায় বলা হয়, ঢাকা শহরের কাফরুল থানাধীন মহাখালী ডিগএইচএস বাড়ি নম্বর-৩১৬, রোড নম্বর-২১, লেভেল নিউ ডিওএইচএস এ অফিস ভাড়া নিয়ে দুই ভাই তাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসাস এসবি ট্রেডার্স, মেসাস সাজ্জাদ বরকত কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমেটেড, মেসাস রুবেল ট্রেডাস, রাফিয়া কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে ফরিদপুর জেলার এলজিইডি অফিসসহ বাংলাদেশের সব এলজিইডি অফিসের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চাঁদাবাজির মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অবৈধ পন্থায় টাকা উপার্জন শুরু করে।
সংঘবন্ধ মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, হত্যা, বিদেশী মুদ্রা পাঁচার ও হুন্ডির মাধ্যমে বিগত দুই দশকের মধ্যে তারা অর্জিত অবৈধ অর্থের দ্বারা সাউথ লাইন যাত্রী পরিবহনের এসি/ননএসি ২৪টি বাস, ১০টি ট্রাক, দুইটি পাজেরো, দুইটি মাইক্রোবাস, ১টি নিশান মিনিবাস। যার অধিকাংশ নম্বরহীন। এছাড়া একটি গেস্ট হাউজ, ৮ হাজার বর্গফিটের উপর নবনির্মিত বিল্ডিং, বরকত এগ্রো প্রা. লিমিটেড, মেসাস এসবি ডেইরি ফার্ম, নর্থ চ্যানেল বাগানবাড়ী, এসবি ব্রিকফিল্ড, এসবি পাথর ক্রসিং, এসবি প্রেস, এসবি ট্রেডার্স, বরকত কনষ্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও একটি পেট্রোল পাম্প প্রতিষ্ঠা করে।
এছাড়া আসামিরা ফরিদপুর জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলার গোয়ালচমট, বদরপুর, ডোমরাকান্দি, কৈজুরি, তাম্বুলখানা, কবিরপুর, তুলাগ্রাম, পিয়ারপুর, শিবরামপুর, চরফাতেপুর, নর্থ চ্যানেল ৩৮ দাগ, চন্ডিপুর, চাঁদপুর এলাকায় ভূ-সম্পত্তি গড়ে তোলেন।
তারা অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য অবৈধ অস্ত্র বহন করায় গত ৮ জুন তারা অবৈধ অস্ত্র ও বিদেশী মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট, চাল, ডলার, ভারতীয় রুপীসহ গ্রেপ্তার হয়। ওই ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় ১৬(৬)২০২০, ১৮(৬)২০২০ এবং ১৯(৬)২০২০ নম্বরে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়, আসামিগণ অবৈধ পন্থায় অর্জিত টাকা দ্বারা উল্লেখিত সম্পদের মালিক হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের সম্পত্তির মূল্য অনুমান দুই হাজার কোটি টাকা।