আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ও গুজব
আব্দুল হাকিম ♦
আমাদের দেশে একটা প্রচলন হয়ে দাঁড়িয়েছে কোন কথা শুনে সত্যতা জানার আগেই লেগে যায় প্রতিযোগিতায়। কার আগে কে কাজটি সম্পন্ন করবে তাতে ব্যস্ত থাকি আমরা। পর পর কয়েকটা ঘটনায় তাই দেখতে পাই। যেমন সাঈদীকে চাঁদে দেখা, বাঁশের পানি খাওয়া, থানকুনি পাতা খেলে করোনা হবে না ইত্যাদি।
বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে যেখানে বিশ্ব কোন সমাধান বের করতে পারেনি। সেখানে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আবিষ্কার করছে গো-মূত্র। গো-মূত্র খেলে না কি করোভাইরাস হবে না। এই ভেবে গো-মূত্র পানির মতো খেয়েছে একটা গ্রুপ। গো-মূত্র পান করে অনেকেই নাকি আবার হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। বাংলাদেশে রাতে রাতে আবিষ্কার করলো থানকুনি পাতা। এই পাতা খেলে নাকি করোনাভাইরাস হয় না। এমন খবরে যত জায়গায় থানকুনি পাতা ছিলো রাতারাতি সব সাবাড়।
এতো সব গুজব ঘটার পরেও আমরা সত্যতা না জেনেই কাজ করে ফেলি। এরপরও কি আমাদের বিবেক স্থির, নাকি অস্থির হয়ে গেছে? কি বলবো জানি না। তবে এই টুকু বলবো যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তিনিই বিপদ দেন, তিনিই আবার এর থেকে উদ্ধার করেন। তাই আমাদের উচিত সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথে চলা এবং সকল বিপদ-আপদে স্থির থেকে অবস্থা বুঝে সচেতন থাকা। মহান আল্লাহ চাইলে আমরা মহামারি থেকে মুক্তি পাবো নয়তো মহামারির আঘাতে পৃথিবী ত্যাগ করবো। কেউ চাইলেও তা ঠেকাতে পারবে না।
তাই আমাদের উচিত কোন বাবা অথবা ফকিরের কথায় কান না দেয়া। যেহেতু রোগটা বিশ্বব্যাপী তাই সবাই চেষ্টা চালাচ্ছেন এর থেকে কিভাবে পরিত্রান পাওয়া যায়। আমাদের অপেক্ষা করা বা সচেতন হওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। আর এ সচেতনতার কিছু উপায় জেনে রাখা ভাল।
উপায়গুলো হলো:
১. আপনার প্রতিদিনের কাজের পর হাত মুখ ভালোভাবে পরিস্কার রাখুন।
২. শুধু করোনা নয় বরং যে কোনো প্রকার ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন।
৩. আপনার জানা মতে কেউ যদি বিদেশ থেকে এসে কোন রকম নিয়ম কানুন না মেনে চলাফেরা করে, আতঙ্কিত না হয়ে ৩৩৩ কল দিয়ে জানিয়ে দিন। কারো ক্ষতির জন্য নয় বরং সবার সুরক্ষার জন্য এই কাজটি করুন।
৪. যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসবেন, আপনারা আপনাদের দেশ, পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের এবং আপনার সুরক্ষার জন্য নিয়ম মেনে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকুন। এতে সবাই সুরক্ষিত থাকবে এবং আতঙ্ক ছড়াবে না।
৫. সব সময় হ্যান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহার করুন। সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিন এতে নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদি স্পর্শে সুরক্ষা থাকবে।
৬. আইইডিসিআর এর পরামর্শ মেনে চলুন।
৭. কেউ আক্রান্ত সন্দেহ হলে সরকার ঘোষিত হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসা ক্যাম্পে চেক করান। যেখানে সেখানে চেক করতে গেলে সঠিক সমাধান পাবেন না। বরং ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
৮. সর্দি কাশি কিংবা জ্বর হলে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। সতর্ক থাকুন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
৯. যাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তাদের থেকে দুরে থাকুন কারণ এটি ভাইরাসজনিত রোগ। সতর্ক না থাকলে বিপদ ঘটতে পারেন।
১০. পরিবারের কাউকে যদি করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহ হয় কিছু দিন নির্দিষ্ট ঘরে একা থাকতে দিন। সব কিছু আলাদা ব্যবহার করুন কারণ এই ভাইরাসটি এক সপ্তাহ কিংবা ১৪ দিন না যেতে সনাক্ত করা যায় না।
১১. করোনা আক্রান্ত রোগী থেকে কিছু দিন দুরে থাকা কিংবা রোগীকে দুরে রাখা মানে এই নয় যে তাকে ঘৃনা করা। বরং বর্তমানে মহামারি আকার ধারন করা ভাইরাস থেকে দেশ, পরিবার, কিংবা পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার জন্য এই কাজগুলো মেনে চলুন।
১২. রাস্তায় চলাচলে সতর্ক থাকুন, জনসমাগম এড়িয়ে চলুন।
মহান আল্লাহ সবাইকে সুরক্ষিত রাখুন (আমিন)
লেখকঃ সাংবাদিক।