গ্রামে-গঞ্জে বিদেশফেরতদের দেখলেই মানুষ পালাচ্ছে

নিউজ ডেস্ক |

বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপ। নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে ফিরেছেন অনেকেই। প্রত্যেকেরই কথা জীবন বাঁচাতেই ফেরা। কাউকে বিপদে ফেলতে নয়। কিন্তু নিজের দেশে এসে যেন চক্ষুশুল হয়েছেন তারা। সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন নির্মাণ শ্রমিক মিজানুর রহমান। পঞ্চগড় জেলার এই ব্যক্তি বলেন, দেশে যখন আসি তখনও দেশে করোনা আসে নাই। প্রথমে সবাই খুব আদর যত্ন করল।

আমি যে ঘরে একা থাকবো সেই সুযোগটাই পাচ্ছিলাম না। তারাই আমার সঙ্গে মিশতে ব্যাকুল। কিন্তু এরপর থেকেই আমার সঙ্গে দুরত্ব তৈরি করতে শুরু করলো সবাই। এর কদিন পর দেখি আমাদের বাড়িতে আর কেউই আসছে না। বাইরে বের হলে, আমাকে দেখে দুর দিয়ে হেঁটে যায় গ্রামবাসীরা।

তিনি আরো বলেন, গ্রাম এলাকা অসচেতন সবাই। আমি দেশে আসার প্রায় ২০ দিন হলেও এখনও যেন বন্দি।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে উপজেলায় মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন মো. কবির। তিনি সেখানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। বলেন, প্রথমে ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার পর বাসস্ট্যান্ডে নামি। আমাকে দেখে প্রথম প্রশ্ন, কেন দেশে এসেছি? একটা রিক্সা পর্যন্ত পাইনি বাড়িতে যাবার জন্য। এরপর বাড়িতে যাবার পর আমার চাচাতো ভাইয়েরা বাড়িতে ঢুকতে দেয়না। উপায়ন্ত না দেখে বউটাকে নিয়ে গেলাম শ্বশুর বাড়ি। সেখানে থাকলাম লুকিয়ে। এরপর বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। কিছুদিন পর গ্রামে রটে গেলো করোনা ভাইরাস নিয়ে আমি গ্রামে আসছি। অবস্থা এমনই হলো আমাকে সেখান থেকে রাতের আধারে পালিয়ে যেতে হলো। এখন বাড়িতে আছি। কিন্তু কেউ কোন কথাও বলে না। বাড়ি থেকে বেরও হইতে পারি না। তিনি প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, কি বলবো ভাই। একদিন বাজারে গেছিলাম প্রায় বাজার ফাঁকা হয়ে গেলো। ছোট বাজার কয়েকটা মাত্র দোকান। যে চাচা আমারে মারতে আসছে প্রথম, তার ছেলে আমার সঙ্গে একসাথে কাজ করে।

প্রশ্নের জাবাবে বলেন, আমি আইইডিসিআর এ হট লাইনে যোগাযোগ করেছিলাম। প্রায় ৩টা নম্বর থেকে কয়েকবার চেষ্টা করার পর তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেছেন, আপনার পরীক্ষার প্রয়াজন নেই। তবে ঘরে নিয়ম মেনে থাকেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় মাস্টার্স পড়ছেন লোটাস চৌধুরী। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে সেখানে পড়তে যান। করোনার প্রকোপে দেশে ফেরেন। এসে নিয়ম মেনে ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এরপরেও তাকে দেখে ভয় পায় সবাই। তিনি বলেন, রীতিমতো আমি বাড়িতে বন্দি। এমনি অবস্থা হয়েছে আমি কারো সঙ্গে মোবাইলে কথা বললেও তারা ভয় পাচ্ছে। আমার এক চিকিৎসক বন্ধু আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো। সে ফিরে যাবার পর থেকে তার সঙ্গেও নাকি অনেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমি নিজেই ফার্মাসীর শিক্ষার্থী। এছাড়াও কোরিয়ার করোনা মোকাবিলার কৌশল দেখে এসেছি। একটা কথাই বলব, আমাদের জানার বড্ড অভাব। আর সচেতনার থেকে ভীতি বেশি।

মৃনালীনি ঘোষ, চীন থেকে ফিরেছেন জানুয়ারির মাঝামাঝিতে। বলেন, যখন করোনা ভাইরাস প্রায় সুপ্ত ও চীনে কেবল আঘাত হেনেছে তখন আমি দেশে আসি। কিন্তু এখনো যেন আমি চীনে যাবার অন্যায়ের মাশুল দিচ্ছি। এমন একটা ভাব করে সবাই যেন, চীনে যাওয়াটা আমার অন্যায় ছিলো। যেহেতু চীন থেকে ছড়িয়েছে তাই চীন ফেরতদেরও সমস্যাটা সর্বাধিক। শুক্রবার বাড়ির ছাদে গিয়েছিলাম, সেখানে অনেকেই ছিলো। আমি যাবার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নাক চেপে ধরে চলে গেলো। এটা দেখে আমার কান্না আসছিলো। তিনি আরো বলেন, আমার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। শুনেছি সেখানেও নাকি অনেকেই যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email