আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে সববয়সীর!
লকডাউনেে ডিজিটাল ডিভাইসময় জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক |
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ ছুটির কারণে জরুরি সেবার বাইরে সব কর্মজীবীই এখন অবসরে। খেলার মাঠ, চায়ের দোকানের আড্ডা, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো, সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান কিংবা উপাসনালয়ে গিয়ে প্রার্থনা, কিছুই করার সুযোগ নেই। ফলে এখন অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রযুক্তিসামগ্রীতে নির্ভর করতে হচ্ছে ঘরবন্দি এসব মানুষকে। বিশেষত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর টেলিভিশনই হয়ে উঠছে এ করোনা দিনে তাদের সঙ্গী। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স—এসব অনলাইন দুনিয়াই এখন ঘরবন্দি মানুষের জগৎ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের বড় একটি সময়জুড়ে মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকার কারণে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনেরই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, এ ধরনের ডিভাইস একনাগাড়ে ব্যবহারের কারণে ঘাড় ব্যথা, চোখের সমস্যা, মাথা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন রয়েছে, সেটির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি কমে আসায় মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে, মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকার এ অভ্যাস আসক্তিতে রূপ নিতে পারে। এ ধরনের ডিভাইস দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘুমের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা শুধু বিভিন্ন তথ্যভাণ্ডারের মধ্যে থাকি। সেখানে সৃজনশীলতা কিংবা চিন্তার সুযোগ নেই। এর চেয়ে বই পড়া অনেক ভালো কাজ দেয়। আমার মতে, করোনার আগে আমরা যেমন একটি রুটিন লাইফ লিট করতাম। একইভাবে ঘরে থাকা সময়ের জন্যও রুটিন করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করা, তাদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতে পারেন। ঘরে বসেই অনেক শারীরিক ব্যায়াম করা যেতে পারে। মেডিটেশন করতে পারেন। আত্ম-উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনলাইনে কোর্স করতে পারেন।
ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে শিশুদের চোখে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। কয়েক বছর আগে কিশোরগঞ্জে স্কুলগামী সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালান সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের অপথালমোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা। ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ওপর পরিচালিত ওই গবেষণায় ১৫ শতাংশের চোখে সমস্যা ধরা পড়ে। এর মধ্যে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা ধরা পড়ে ৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর। স্ক্রিন আসক্তির কারণে শিশুরা চোখের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে ওই গবেষণায় উঠে আসে।
শিশুদের পূর্ণ বিকাশের জন্য মোবাইল ও কম্পিউটারের প্রতি ঝোঁক কমিয়ে আনার পরামর্শ চিকিৎসকদের। এ ব্যাপারে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ বলেন, শিশু-কিশোরদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন-কম্পিউটার যতটা সম্ভব দূরে রাখাই ভালো। এগুলো তাদের কল্পনাশক্তিকে সীমিত করে ফেলে। এছাড়া চোখ ও মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে। তিনি বলেন, এখন শিশুদের সারা দিন ঘরে থাকতে হয়। তাদের ঘরে আটকে রাখা খুব কষ্টকর। ঘরে থাকতে থাকতে শিশুরা মানসিক অবসাদেও ভুগতে পারে। এ অবস্থায় তাই অভিভাবকদের আরো মনোযোগী হতে হবে। শিশুদের বেশি বেশি সময় দিতে হবে। তাদের সঙ্গে গল্প করতে হবে। ঘরের ভেতরে খেলা করতে হবে। বাসার দরজা-জানালা খোলা রেখে বাইরের পৃথিবীটাকে দেখার সুযোগ করে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে তাদের নিয়ে ছাদে যেতে পারেন।