শিরোনাম :

  • মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

প্রতিক্রিয়া ==========

সাংবাদিকদের সাবেক নেতার পরিচয়ে তারা মালিকের ভূমিকায়!

আবদুল মজিদ ♦

প্রত্যেক মানুষ তার শ্রেণি চেতনা দ্বারা পরিচালিত হন। মালিক শ্রেণি যে কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতেও তার শ্রেণি স্বার্থ ধরে রাখার চেষ্টা করে-এর জ্বলন্ত প্রমাণ পেলাম গতকাল রোববার।
বিএফইউজের সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেখা করেছেন মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে। নয়টি দাবি তুলে ধরেছেন তারা। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, সাংবাদিকদের সাবেক নেতার পরিচয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও দাবি তুলে ধরার প্রশ্নে তারা মালিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। উত্থাপিত নয়টি দাবির মধ্যে ছয়টিই মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে। তিনটি সাধারণ সাংবাদিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, যা ইতিমধ্যেই বিএফইউজে ও ডিইউজে’র নির্বাচিত নেতারা বিবৃতি দিয়ে ও সামাজিক গণমাধ্যমে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
করোনা পরিস্থিতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনের পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। তারা সরকারের কাছে প্রণোদনাও চেয়েছেন। মালিকরা তাদের শ্রেণিগত অবস্থান থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এসব দাবি জানাবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। কিছুদিন আগে মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গণমাধ্যমের মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছেন। মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর কাছে গতকাল সাবেক সাংবাদিকদের শীর্ষ নেতাদের তুলে ধরা নয়টি দাবির ছয়টিই মালিকদের দাবিগুলোরই প্রতিধ্বনি মাত্র। বরং একধাপ এগিয়ে আগামী তিন মাস সাংবাদিকদের বেতন দিতে স্বল্প সুদে মালিকদের ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আমাদের সাবেক নেতারা। সাধারণ সাংবাদিকদের শোষণ ও বঞ্চিত করে এতদিন ধরে মালিকরা যে টাকার পাহাড় গড়লেন, তা কোথায় গেলো? এখন সাংবাদিকদের বেতন দেওয়ার সক্ষমতা তাদের নেই, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, করোনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মালিক শ্রেণি আরও কিছু টাকা লুটে নিতে চায়। প্রশ্ন হলো আমাদের সাবেক শীর্ষ নেতারা এই মালিক শ্রেণির হাতিয়ারের ভূমিকায় গেলেন কেন? তবে কি মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন যে পাচজন নেতা, তাদের দুইজন সম্প্রতি গণমাধ্যমের মালিক বনেছেন, এটিই এর কারণ। দুজনই সাংবাদিক মহলে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তাদের ফেস ভেল্যুর জন্যই এই প্রভাব। দুজনের একজন ইকবাল সোবহান চৌধুরী, যাকে আমরা অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে জানি। অন্যজন, মনজুরুল আহসান বুলবুল, যাকে আমরা মেধাবী সাংবাদিক নেতা হিসেবে জানি। শুধু সাংবাদিকতা করলে এতটা ফেস ভেল্যু তাদের হতো না, যদিনা তারা আমাদের ভোটে বার বার নির্বাচিত না হতেন। সেই নমস্য নেতারা আমাদের স্বার্থ রক্ষার নামে মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মালিকদের স্বার্থ রক্ষার প্রাণান্তকর চেষ্টা করলেন।
আসলে প্রভাবশালী ওই দুই সাংবাদিক নেতা এখন মালিক বনে যাওয়ায় তাদের নিজ নিজ শ্রেণি স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ সাংবাদিক থেকে মালিক বনে যাওয়া মানে তাদের শ্রেণি উত্তরণ ঘটেছে। অবশ্য এই শ্রেণি পরিবর্তনের পেছনে সাধারণ সাংবাদিকদের ভূমিকাই বেশি। আমাদের ভোটে নেতা না হলে হয়তো এই শ্রেণি উত্তরণ হতো না। এই শ্রেণি উত্তরণে সাধারণ সাংবাদিকরা সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে মাত্র। তারপরও আমরা গর্ববোধ করি যে, আমাদের মাঝে থেকে দুজন আমাদের প্রভাবশালী নেতা হয়ে এখন গণমাধ্যমের মালিক হয়েছেন।
আপনাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ এখন থেকে আপনারা আপনাদের নতুন শ্রেণিগত পরিচয় ধরে রাখতে ও তার বিকাশে সাংবাদিক নেতার পরিচয় না দিয়ে নতুন পরিচয়কে সর্বস্তরে তুলে ধরুন।
মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আপনারা নগদে যা এনেছেন তাহলো সাধারণ বিপদগ্রস্ত সাংবাদিকদের টিসিবির পণ্য কম মূল্যে কেনার সুযোগ করে দেওয়া। টিসিবির পণ্য সমাজের কোন শ্রেণির মানুষ কেনে, তা সবাই জানি। একমাত্র মালিকরাই সাংবাদিকদের ওই শ্রেণির মানুষের কাতারে দেখতে পছন্দ করবেন, কোনো সাংবাদিক নেতা নয়। আপনারা পেরেছেন, কারণ আপনাদের নতুন শ্রেণিগত অবস্থানের জন্য। আপনারা সাধারণ সাংবাদিকদের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি বয়ে আনলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে করোনা পরিস্থিতিকে সামলে নিতে একটা থোক বরাদ্দ পেলে আমরা সম্মানিত হতাম। টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ বয়ে এনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে থোক বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনাকে তিরোহিত করলেন না তো আপনারা?

লেখকঃ যুগ্ম মহাসচিব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, সদস্যঃ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল ও সম্পাদক, ঢাকা ডিপ্লোমেট.কম

  • ফেসবুক টাইমলাইন থেকে