ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের বিভেদ পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের লাভবান করবে – খেলাফত মজলিস
কালো দিবসের আলোচনা
‘এখন প্রতিদিনই গণমাধ্যমের জন্য একেকটি কালো দিন’
নিজস্ব প্রতিবেদক |
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার চারটি পত্রিকা রেখে অন্য সব পত্রিকা বন্ধ করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছিল। আর বর্তমান সরকার শুধু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধই করেনি, বরং গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিরাও সেলফ সেন্সরশীপ করছেন। দেশে আজ বাকশালের চেয়েও খারাপ অবস্থা চলছে। এখন প্রতিদিনই গণমাধ্যমের জন্য একেকটি কালো দিন। গণমাধ্যম না থাকলে দেশে গণতন্ত্র থাকে না। তাই গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সাংবাদিক সমাজসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) দুপুরে ‘সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে যৌথভাবে এই ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে।
বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারন সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবদুস শহীদ ও কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত ও বাছির জামাল, সাবেক সহ সভাপতি সৈয়দ আলী আসফার, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর, ক্রীড়া সম্পাদক আবুল কালাম, জনকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, নির্বাহী সদস্য শহীদুল ইসলাম, জেসমিন জুঁই, সিনিয়র সাংবাদিক দিদারুল আলম মজুমদার, দিগন্ত টিভির ইউনিট চীফ আবু বকর প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন যেমন সংবাদপত্রের কালো দিবস তেমনি এখন প্রত্যেক দিন কালো দিবস চলছে। ভিন্নমতের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছে না। উল্টো হামলা-মামলাসহ নানা ধরণের নির্যাতন চালাচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক সংগ্রাম অফিসে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালিয়ে সম্পাদককে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। এখন তাকে জামিন পর্যন্তও দিচ্ছে না। অবিলম্বে সংগ্রাম সম্পাদকসহ সকল সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবি করছি। সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিয়ে সাংবাদিক ছাঁটাই বন্ধ করে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করুন। তা না হলে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।
শওকত মাহমুদ বলেন, সংবাদপত্রের কালোদিবস উপলক্ষে আজ বেশিরভাগ পত্রিকাই ১৬ জুন সম্পর্কে কিছু লেখেনি। আজকে সাংবাদিকদের মধ্যেও কালো দিবস পালনের আগ্রহ নেই। একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করার জন্য সেদিন বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যার উদ্দেশ্যে সংবাদপত্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বাকশাল কায়েম সহজ করতে দেশকে সাংবাদিকশূন্য করার প্রয়াস হিসেবে তা করা হয়েছিলো। আজকেও সে পরিস্থিতির অবসান হয়নি। আমরা এখনো প্রতিনিয়ত কালো দিবসের শিকার হচ্ছি। তবে, বাকশাল আর বর্তমানের ফ্যাসিবাদ এক নয়। এই দুই সময়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তা হলো- গণমাধ্যম বন্ধ করা ছাড়াও এখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সেলফ সেন্সরশীপ চলছে।
তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে দুটি পরিবার রয়েছে। একটি হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার। আরেকটি জিয়াউর রহমানের পরিবার। শেখ মুজিবুর রহহমানের পরিবার গণমাধ্যম বন্ধ করে সাংবাদিকদের উপর দলন-পীড়ন চালায়, আর জিয়াউর রহমানের পরিবার বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিয়ে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।
তিনি আরো বলেন, দেশ ও গণমাধ্যমকে আজকের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে সাংবাদিকদেরই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম আজ গভীর সংকটে। গণতন্ত্রের মূল শর্ত বাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যম। অথচ, দেশে আজ বাক-স্বাধীনতা নেই। স্বাধীন গণমাধ্যম নেই। করোনাকালেও ৬৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম প্ররতিষ্ঠান থেকে শত শত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হচ্ছেন। বেতন বকেয়া মাসের পর মাস। এ প্রসঙ্গে তিনি কালের কন্ঠ, ইনকিলাব, আলোকিত বাংলাদেশ ও এস এ টিভি থেকে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুুত করার উদাহরণ তুলে ধরেন।
এছাড়া ভিন্নমত পোষনকারীদের নানাভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। সবাইকে ক্ষুদ্র ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এসবের বিরোদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ৭২ পরবর্তী সরকারের সংবাদপত্র দলনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, সকল সংবাদপত্র বন্ধ করার আগেই সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান, এনায়েতুল্লাহ খান রোষানলে পড়েছিলে। গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন সাংবাদিক নেতাদের শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। তিনি তাঁর অসহায়ত্বের কথাও জানান। এতে প্রশ্ন উঠেছিল সে সময়ে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শেখ মুজিবুর রহমান কার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সংবাদমাধ্যমের অন্ধকার যুগ চলছে। আওয়ামী লীগ মিডিয়ার জাত শত্রু। আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় থাকে তখনই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। গণমাধ্যম কর্মীরা আজ প্রতিনিয়ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছে। এসময় তিনি সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিয়ে সকল সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবি জানান। পাশাপাশি করোনাকালো সকল সাংবাদিকদের প্রণোদনা দেয়াসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবি জানান।
আবদুস শহীদ বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই প্রথম টার্গেট করেছে সংবাদপত্রকে। তারা গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় কখনোই বিশ্বাসী ছিলোনা। পচাত্তর সালে সব সংবাদপত্র বন্ধ করেছে। ছিয়ানব্বই সালে এসে দৈনিক বাংলা ও টাইমস বন্ধ করেছে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, পচাত্তরের আগেই তৎকালীন সরকার মাওলানা ভাসানীর হককথা পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করেছিল। গণকন্ঠ অফিস গুড়িয়ে দিয়ে সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে জেলে নিক্ষেপ করেছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এক সাথে যায়না।
বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন বলেন, গণমাধ্যম এবং সংবাদ কর্মীরা আজ মহাদুর্যোগে। সংবাদপত্র শিল্পের জন্যে প্রতিটি মুহূর্ত এক একটি কালো মুহূর্ত। করোনার মহাবিপদের মধ্যেও সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, ভিন্নমত দলন চলছেই। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ জেলে, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দেশান্তরী, বহু সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম বন্ধ। এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন।