শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

লস এঞ্জেলেসে কনসাল জেনারেলের বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে দু’পক্ষে উত্তেজনা

আহমেদ ফয়সাল, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে |


হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। লস অ্যান্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বাবু প্রিয়তোষ সাহার বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে এ উত্তেজনা। সংবর্ধনা হওয়ার কথা ৩১শে অক্টোবর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭ টায়। কিন্তু এই সংবর্ধনা সভা নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে পক্ষে বিপক্ষে বেশ তীব্র বিতর্ক চলছে স্যোশাল মিডিয়াতে।

এদিকে যতই সংবর্ধনার সময় এগিয়ে আসছে, ততই
এই উত্তেজনা সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়িয়ে মাঠে ময়দানে ছড়িয়ে পড়ছে। পাল্টাপাল্টি এই উত্তেজনাকর অবস্থা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, সম্মানজনকভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হতে পারবে কিনা, তাই নিয়েই সন্দেহ ও সংশয় তৈরী হয়েছে।

এই সংবর্ধনা সভা নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামী লীগেরই দুটি অংশ পক্ষে বিপক্ষে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া সেচ্ছাসেবক লীগ নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন থেকেই বেশ সরব। ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামীলীগের ফেসবুক পেইজ থেকেই দীর্ঘদিন ধরে কনসাল জেনারেল বাবু প্রিয়তোষ সাহার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। তারা বাংলাদেশ সরকারের নিকটে এই ভবন ক্রয়ের অস্বচ্ছতা তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছেন।

তাছাড়া কমিউনিটির অধিকাংশ সাধারণ জনগণও বিতর্কিত কনসাল জেনারেল বাবু প্রিয়তোষ সাহার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিপক্ষে। এমন উত্তেজনার প্রেক্ষিতে কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের অনেকেই সংবর্ধনা সভা বাতিলের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার (৮.৮ মিলিয়ন বা চল্লিশ কোটি টাকার অধিক) দিয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের জন্য স্থায়ী অফিস ভবন ক্রয় করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই ভবন ক্রয়ে কম করে হলেও চার মিলিয়ন ডলারের ঘাপলা আছে। বেশ কয়েকজন রিয়েল স্টেট ব্রোকার ও নির্মান ব্যাবসায়ী জানিয়েছেন যে, ওই ভবনের বর্তমান বাজারমূল্য কোন মতেই চার-সাড়ে চার মিলিয়নের বেশী হতে পারেনা। একটি বিশেষ মহল ছাড়া কমিউনিটির সকলেই মনে করেন যে, এই অফিস ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়ছে।
অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে কমিউনিটির সর্বসাধারণকে অজ্ঞাত রেখে লস এঞ্জেলেসের বাঙ্গালী পাড়া হিসাবে পরিচিত লিটল বাংলাদেশ নেইবারহুড থেকে বেশ দূরে এই ভবন ক্রয় করা হয়। অথচ এর অর্ধেক দামে লিটল বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আরো ভালো ভবন ক্রয় করা সম্ভব হতো বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। তাছাড়া ঐ ভবন কূটনৈতিক জোনেও নয়, কমিউনিটির সুবিধার বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
১৮টি গাড়ি পার্কিং’এর মধ্যে ১২টি অফিস স্টাফদের জন্য রেখে ৬ টি জনগণের জন্য রাখা হলেও অনেকেই জানিয়েছেন যে, এখন পর্যন্ত উক্ত পার্কিং সুবিধা নিতে পারেননি।

জানা গেছে, সম্প্রতি কনসাল জেনারেলের বসবাসের জন্য স্থায়ী বাড়ি করা হয়েছে, যে সংবাদ এখনো কমিউনিটিতে চাউর হয়নি। অভিজাত ব্যাল্ডউইন হিলে ক্রয়কৃত ওই বাড়ি কত ডলারে ক্রয় করা হয়েছে, তা এখনো সুনিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের এক আদেশে কনসাল জেনারেল বাবু প্রয়তোষ সাহার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যাস্ত করা হয়েছে। অতি শীঘ্রই তিনি এল.পি.আরে যাচ্ছেন।

এদিকে বাবু প্রিয়তোষ সাহার বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান
অতিথি হিসেবে আরটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিক রহমান উপস্থিত থাকবেন বলে প্রচার করা হলেও বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, তিনি ওই সংবর্ধনা সভায় থাকছেন না। তিনি এই মূহুর্তে মিসিগান স্টেটের ডেট্রয়েট সিটিতে অবস্থান করছেন। তিনি ১ নভেম্বর, অর্থাৎ সংবর্ধনা সভার পরের দিন লস এঞ্জেলেসে আসা নিশ্চিত করেছেন। আশিক রহমান মূলত হলিউডে অনুষ্ঠিতব্য সাপলুডু ছবির প্রিমিয়ার শো’তে অংশগ্রহণের জন্য লস এঞ্জেলেসে আসছেন।

এদিকে কমিউনিটির অনেকেই মনে করেন যে, সৈয়দ আশিক রহমান এমন বিতর্কিত অনুষ্ঠানে অতিথি হতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, লিটল বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নামে ওই সংবর্ধনা সভার আহ্বান করা হলেও অনেকেই মনে করেন যে, প্রেসক্লাবকে ব্যাবহার করে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের কলকাঠি নাড়ছেন তৃতীয় কোনো পক্ষ। এক বিতর্কিত ব্যক্তির সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে প্রেসক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা কমিউনিটির সর্বসাধারণের আস্থা ও শ্রদ্ধা হারাচ্ছেন বলেই সর্বসাধারণের অভিমত।

কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা মনে করেন, শেষ মূহুর্তে এসে হলেও এমন বিতর্কিত ব্যক্তির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে সরে দাড়ানোই হবে লিটল বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া এই বিতর্কিত অনুষ্ঠানের আয়োজনের সাথে প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা সকলে একমত নন, বরং ক্লাবের মেম্বার অনেকেই এই বিতর্কিত উদ্যোগে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।