• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সীমান্ত হত্যা ফেলানী ইস্যুই সম্মেলনে বেশি গুরুত্ব পাবে: বিজিবি ডিজি

BGB DGনিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।

বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর মাহপরিচালক পর্যায়ের এ সীমান্ত সম্মেলন আগামী ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পিলখানায় অনুষ্ঠিত হবে।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর বিজিবির সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে  আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির ডিজি এ কথা জানান।
৫ ডিসেম্বর বিজিবি মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছর উপলক্ষে ‘গত তিন বছরে বিজিবির অর্জিত সফলতা’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এবারের সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনায় সীমান্ত হত্যাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া মাদক, চোরাচালান ও ফেলানীর সর্বশেষ ইস্যুও আলোচনার শীর্ষে থাকবে।’

সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও সেটা গত তিন বছরে করতে না পারায় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিজি বলেন, ‘গত বছর সীমান্তে ৪০ জন নিহত হয়েছিলো, এবার তা কমে ৩৩-এ দাঁড়িয়েছে। হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে না পারলেও তা কমেছে।’

রাতের আঁধারে আমাদের লোক বর্ডার অতিক্রম না করলে এ হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘গরু আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেরা সাবলম্বী হতে পারলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে।’

বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশ করে হত্যা করছে এমন খবর পত্র-পত্রিকায় আসছে সাংবাদিকদের এমন কথার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই আপনাদের পাওয়া সব তথ্য সঠিক নয়। আপনারা বলেন, বিএসএফ ২ জনকে ধরে নিয়ে গেছে, কিন্তু এ দেশের সীমান্ত নয় বরং তাদের দেশের সীমান্ত থেকেই নিয়ে গেছে, সেই কথাটা আড়ালেই থেকে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বিশাল বর্ডারের মধ্যে ২-১টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকতে পারে। আপনারা প্রমাণ দেন, আর আমি যদি সে দেশের সীমান্তেই হত্যার প্রমাণ দিতে না পারি তাহলে এই চেয়ার ছেড়ে দিবো।’

ফেন্সিডিলের পর এখন সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে- সাংবাদিকরা এমন দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘ফেন্সিডিল এখনও যে পরিমাণ ঢুকছে তাতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। চাহিদার জায়গাটাতে আপনাকে আঘাত করতে হবে। চাহিদা কমে গেলে সাপ্লাই কমে যাবে।’

শুধু স্থলসীমান্ত দিয়েই মাদক আমদানি হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, ‘বিমানবন্দর, সমুদ্রপথ দিয়েও বিভিন্ন মাদক আসছে আপনারাতো সে ব্যাপারে কথা বলেন না। ৭০০ কিলোমিটার কোস্টলাইন দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে যাচ্ছে। আমি বলছি না যে, ইয়াবার চালান বন্ধে বিজিবির ব্যর্থতা নেই, কিন্তু সব দোষ বিজিবিকে দিবেন না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

মাদকের চালানের সাথে বিজিবির কোন সদস্য জড়িত কিনা জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা শতভাগ ধোয়া তুলশি পাতা সেটা আমি বলছি না। আমি তিন বছরে দুটি বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছি, একটা হলো মাদকের চালান, আরেকটা অনৈতিক সম্পর্ক। এই দুটোর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আমি গত তিন বছরে আমাদের কমপক্ষে ১০০ সদস্যকে বরখাস্ত করেছি।

৩৩১ কিলোমিটার স্থলসীমান্তই অরক্ষিতঃ
বাংলাদেশের ৩৩১ কিলোমিটার স্থলসীমা এখনও অরক্ষিত রয়েছে জানিয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের ৫৩৯ কিলোমিটার স্থলসীমা অরক্ষিত ছিলো। তবে এখন এর মধ্যে ২০৮ কিলোমিটার আমাদের নজরদারিতে চলে এসেছে।
আগামী এপ্রিলের মধ্যে আরো ৮০ কিলোমিটার সীমানা নজরদারিতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। আর ২০১৬ সালের মধ্যে শতভাগ সীমান্ত নজরদারিতে আনার লক্ষ্য রয়েছে।’

বিজিবিতে যুক্ত হচ্ছে ১০০ মহিলা সদস্যঃ
গত তিন বছরে বিজিবিতে সাড়ে আট হাজার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের এ বছর ৫০ জন মহিলা সদস্য নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মানুষের আগ্রহের কথা চিন্তা করে আগামী জানুয়ারিতে ১০০ নারী সদস্য নিয়োগ দিয়ে শুরু করা হচ্ছে।’

সীমান্তবর্তী দেশের সাথে হয়েছে সম্পর্কোন্নয়নঃ
সীমান্তবর্তী ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের সাথেও এখন অনেক বেশি সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিজিবির মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের ফলের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভূমি সমস্যার নিস্পত্তি হয়েছে। সীমান্ত পার্শ্ববর্তী লোকদেরকে গ্রেফতার এখন অনেক কমেছে বলেও জানান তিনি।’

চালু হচ্ছে সীমান্ত ব্যাংকঃ
এছাড়া সীমান্ত ব্যাংক নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিজস্ব একটি ব্যাংক শীঘ্রই চালু করা হবে বলেও জানান বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।

Print Friendly, PDF & Email