মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আর নেই

145873_1ঢাকা: বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (৮০) আর নেই ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে দেশের আলেম সমাজ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

দীর্ঘদিন থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

আজ রবিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

পরে তার লাশ নেয়া হবে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার নিজ বাড়িতে। সেখানে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

কর্মময় জীবন

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৩৫ সালের ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আনসার নগরে। তার বাবা হাকীম মৌলভী আনসারুদ্দীন খান ও মা রাবিয়া খাতুন।

পাঁচবাগ মাদরাসা থেকে ১৯৫১ সালে আলিম ও ১৯৫৩ সালে স্কলারশিপসহ ফাজিল পাস করেন। ১৯৫৩ সালে উচ্চ শিার্থে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে হাদিস বিষয়ে কামিল ও ১৯৫৬ সালে ফিক্হ বিষয়ে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ছাত্রজীবন থেকেই সহিত্যচর্চা শুরু করেন। তিনি ১৯৬০ সালে ‘মাসিক দিশারী’, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ‘সাপ্তাহিক নয়া জামানা’ সম্পাদনা করেন ও ১৯৬১ সালে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ‘মাসিক মদীনা’ সম্পাদনা করছেন। এ ছাড়া তার সম্পাদিত ‘আজ’ এক সময় সাহিত্য মহলে সাড়া জাগায়।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৮৮ সালে সৌদিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রাবিতায়ে আলমে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের গফরগাঁও নির্বাচনী এলাকায় জমিয়তের প্রার্থী হিসেবে খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালের সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিনি নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার এ টি এম আবদুল মতীনের সহযোগিতায় ‘দারুল উলুম ইসলামী একাডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। স্বাধীনতার পর এ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ রাখা হয়।

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ২০০৫ সালের ৯ ও ১০ মার্চ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ‘ভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির ব্যানারে টিপাইমুখ অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চের ডাক দেন। এতে দেশের প্রায় ৩০টি সংগঠন যোগদান করে।

অসহায়, দরিদ্র ও ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, সম্বলহীন লোকদের বসতবাড়ি নির্মাণসহ সার্বিক কল্যাণে তিনি কাজ করে গেছেন। বান্দরবন জেলার কয়েক শ’ উপজাতি পরিবার তার সহযোগিতায় ইসলাম গ্রহণ করে। সেখানে প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষকে তিনি ‘তাওহিদ মিশন’ নামক সংস্থার মাধ্যমে পুনর্বাসন করেন।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্য রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বাংলা ভাষায় সিরাত সাহিত্যের বিকাশে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি প্রায় ১০৫ টি গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা করেন। তার সম্পাদিত ‘মাসিক মদীনা’র প্রশ্নোত্তর সঙ্কলন ‘সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাব’ ২০ খে প্রকাশিত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email