ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান বিশিষ্টজনের
এবার লবণ কেলেঙ্কারি !
হঠাৎ সিলেটের ৪ জেলায় লবণ উধাও
নিউজ ডেস্ক |
সিলেটে প্রতি কেজি লবণের দাম ১০০-১২০ টাকা হওয়ার গুজব ছড়িয়েছে একটি চক্র। সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকালের পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ ৫-১০ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনতে শুরু করেন। তবে সন্ধ্যার পর লবণ বিক্রি বন্ধ করে দেন অনেক এলাকার দোকানিরা। ফলে হঠাৎ লবণ শূন্য হয়ে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন বাজার।
সিলেট নগরের রিকাবীবাজারের ব্যাবসায়ী শরিফ হাসান জানান, বিকাল থেকে ক্রেতারা ৫-১০ কেজি করে লবণ কিনতে শুরু করেন। ফলে সন্ধ্যার আগে তার দোকানের সব লবণ বিক্রি হয়ে যায়। তবে তিনি নির্ধারিত দামেই লবণ বিক্রি করেছেন বলে দাবি করেন।
এদিকে সোমবার রাত ১০টায় সিলেটের পাইকার বাজার কালীঘাট থেকে মজুদ করার উদ্দেশ্যে সরিয়ে নেয়ার সময় ৪৫০ কেজি লবণ জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন। এসময় লবনবাহী ২টি ভ্যান ও একটি রিকশাও আটক করা হয়।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে লবণের দাম বাড়ার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে লবণের দাম বাড়েনি।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘লবণের দাম বাড়েনি। একটি অসাধু চক্র দাম বাড়ার নামে গুজব ছড়াচ্ছে।’
মৌলভীবাজারে ১ ঘণ্টায় লবণের কেজি ১৫০
‘চাচী তাড়াতাড়ি বাজার থেকে লবণ আনো। কাল থেকে ২’শ টাকা কেজি হবে, আমরা ৫ কেজি এনেছি। আম্মার কাছে টাকা নাই আব্বা আসলে আরও আনব।’ এভাবেই গ্রামের প্রতিবেশির ঘরে গিয়ে লবণ কেনার জন্য বলছিল ১৪ বছরের কিশোর।
শুধু এই একটি গ্রাম নয় সোমবার সন্ধ্যার পর জেলার প্রায় গ্রামেই লবণ কেনার জন্য এমন অস্থিরতা শুরু হয়। মানুষের মুখে মুখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব হয়ে যায় লবণের দাম বৃদ্ধির খবর। ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা ৫০ টাকা যা রাত ১০টার দিকে ১৫০ এ পৌঁছে।
লবণের মূল্য আগামীকাল ২০০ টাকায় পৌঁছাবে শুনে বাজারে দৌড়াতে থাকেন শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ৫ থেকে ১০ কেজি যার যা সামর্থ আছে সর্বোচ্চ কেনার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে জেলাব্যাপী অনেক ব্যবসায়ী লবণ মজুদ করতে থাকেন আরও দাম বৃদ্ধির আশায়।
প্রচুর চাহিদা এবং অধিক মুনাফার আশায় মজুদের চেষ্টার কারণে গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় লবণ দিতে পারেনি অনেক মুদির দোকানিরা।
মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার করিম নামের এক দিনমজুর ১০ কেজি লবণ কেনার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী দোকানে যান কিন্তু গিয়ে দেখেন লবন শেষ হয়ে গেছে। পাশের দোকান থেকে ১০ কেজি চাহিদার তুলনার ৫ কেজি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গলের এনামুল হক দাবি করেছেন শ্রীমঙ্গলের সেন্ট্রাল রোডের অনেক ব্যবসায়ী দাম বৃদ্ধির আশায় লবণ মজুদ করেছেন। ১২০ টাকা করে লবণ বিক্রি
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেছেন, আমরা এরই মধ্যে গুজবের বিরুদ্ধে মাইকিং বের করিয়েছি। যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য আমরা কাজ করছি।
সুনামগঞ্জ : রোববার সন্ধ্যা থেকেই জেলা শহর সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে লবণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সঙ্গে বাজারে লবণের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এর আর আঁচ পাওয়া যায়। অনেকেই অভিযোগ করে স্ট্যাটাস দেন, মুদি মালের দোকানগুলোতে অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে।
কিছু মানুষকে গুজবে কান দিয়ে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় বেশি করে লবণ কিনতে দেখা যায়। পরে প্রশাসন থেকে বিষয়টি আমলে নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়।
সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী নেতাদেরকে ডেকে লবণের দাম বেশি না রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি শহিদুর রহমান জানান, সাধারণ ব্যবসায়ীদের বলে দেয়া হয়েছে লবণের কোনো সঙ্কট নেই, প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে।
হবিগঞ্জে লবন উধাও!
সোমবার রাত ৮টার পর হঠাৎ করে হবিগঞ্জে গুজব ছড়ানো হয় লবণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ি ও ক্রেতাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ব্যবসায়ীরা লবণ মজুদ করতে শুরু করেন। অন্যদিকে ক্রেতাদের মধ্যেও লবন কিনকে হুলুস্তুল সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে অনেক দোকানী লবণ বিক্রি বন্ধ করে দেয়। কোনো দোকানে গিয়েই আর লবণ পায়নি ক্রেতারা।
এদিকে, বাজারে লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা ও অতিরিক্ত মূল্যে লবন বিক্রির অপরাধে ৪ জনকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে দুই ব্যক্তিকে ১০ দিনের কারাদণ্ড ও দুইজনকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দিনগত রাত ১টার দিকে হবিগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াছিন আরাফাত রানা এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেন ।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শহরের রাজনগর এলাকার ব্যবসায়ী মো. আব্দুল কাদির নানু, বাতিরপুর এলাকার কানাই দাসের ছেলে সুরঞ্জিত দাস, চৌধুরী বাজার এলাকার রাজকুমার রায়ের ছেলে মিঠুন রায় ও নোয়াহাটি এলাকার রবিন্দ্র পালের ছেলে রঞ্জিত পাল।