আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
ব্যতিক্রমী ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ
দেশনিউজ ডেস্ক |
বাংলাদেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালিত হতে যাচ্ছে আজ সোমবার। এই বছর দিনটি এমন সময়ে পালিত হবে, যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশেও একদিকে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়েও অসংখ্য মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ছুটছেন। সাধারণ ছুটি অব্যাহত থাকলেও সরকারি কড়াকড়ি বেশ শিথিল করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে পালিত হচ্ছে এবারের ঈদুল ফিতর।
গত কয়েকদিন ধরেই নানা দোকানপাট খুলে যাওয়ার পাশাপাশি সড়কেও ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। যদিও গণপরিবহন এখনো বন্ধ রয়েছে, কিন্তু প্রাইভেট কারে, পিকআপ বা অটোতে করে নানা ভোগান্তির ভেতর দিয়ে অসংখ্য মানুষ তাদের গ্রামের বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
এদের একজন ফজুল মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘সেহরি খেয়ে ভোর চারটার দিকে রওনা দিয়েছি ইউসুফ মার্কেট থেকে। সেখান থেকে একটা অটোতে করে এসেছি বাইপাইল। ওখান থেকে নবীনগর। সেখানে পুলিশের একটু কড়াকড়ি ছিল। সেখান থেকে ১০/১৫ মিনিট হেঁটে সামনে পার হয়ে আবার অটো, তাতে করে এলাম কালামপুর। সেখান থেকে খানিকটা হেঁটে, আরেকটা অটো নিয়ে এসেছি মানিকগঞ্জ। সেখান থেকে আবার আরেকটা অটো নিয়ে ঘাটে আইছি।’
গণপরিবহন না থাকায় তার মতো আরো অনেকেই এভাবে বাড়ি গেছেন।
অনেকে নিজের বা ভাড়া করা প্রাইভেট কারে করে বাড়ির পথে রওনা দেন। সড়ক-মহাসড়কগুলোয় অসংখ্য প্রাইভেট কার চলতে দেখা গেছে।
সাধারণত প্রতিবছর ঈদের আগে আগে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী প্রধান দুই ফেরিতে যানজট লেগে যায়। এবার নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন দেখা গেছে উপচে পড়া মানুষের ভিড়।
তবে রোববার ভিড় খানিকটা কমেছে বলে জানাচ্ছেন পাটুলিয়া ফেরি ঘাটের কর্মকর্তা মহিউদ্দিন রাসেল।
তিনি বলছেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় রবিবার ভিড় নেই, একদম ফাঁকা। মানুষজনও কম, গাড়িও কম। একেকটা ফেরিতে ৪০/৫০জন করে পার হচ্ছেন।
১০ মে থেকে দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও, এবার ঈদে তেমন বিক্রিবাট্টা হয়নি বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণত ঈদের আগের রাত চাঁদ-রাত বলে এদিন দোকানপাটে কেনাকাটার ভিড় লেগে যায়। কিন্তু এবার সেরকম ভিড় কোথাও দেখা যায়নি।
ঈদ আয়োজনেও এসেছে পরিবর্তন। কোলাকুলি না করা, নিজ বাড়িতে ঈদ উদযাপনের মতো পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এবারই প্রথম দেশের কোন ঈদগায়ে জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।
বরগুনার পাথরঘাটার একটি মসজিদের ইমাম হাফেজ নূরে আলম বলছেন, ‘এবার তো মসজিদে ঈদের জামাত হবে। বেশি ভিড় যাতে না হয়, সেজন্য আমরা তিনটি জামাতের ব্যবস্থা করেছি। মসজিদ ভরে গেলে মুসল্লিদের অনুরোধ করা হবে যেন তারা পরের জামাতের জন্য অপেক্ষা করেন।’
তিনি জানান, একজনের সঙ্গে আরেকজনের একফুট দূরত্ব রেখে নামাজের জামাতের ব্যবস্থা করা হবে।
তবে দুই মাসের টানা লকডাউন সত্ত্বেও, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে আর মৃত্যু হয়েছে ৪৮০ জনের। রবিবার সর্বোচ্চ ২৮জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে দোকানপাট খোলা, মানুষের যাতায়াতে কড়াকড়ি তুলে নেয়ার মতো শিথিলতার কারণ কি?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলছেন, বাস্তবতার নিরিখে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মানুষ দীর্ঘদিন ঘর বন্দী থাকতে চায় না। মানুষের ডিম্যান্ড, মানুষের প্রয়োজন, সবকিছু বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মানুষের প্রয়োজনের বিষয়গুলোও দেখতে হচ্ছে, ইমোশনের বিষয়গুলোও দেখতে হচ্ছে, রুটিরুজির-উপার্জনের বিষয়গুলোও দেখতে হচ্ছে।’
‘একইভাবে চিকিৎসার বিষয়গুলোও সঠিকভাবে অব্যাহত রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বরং চিকিৎসার বিষয়গুলো আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে,’ সবকিছুর সমন্বয়েই আসলে বিষয়গুলো চলছে।
তিনি আহবান জানা, জরুরি প্রয়োজনে কেউ যদি বাইরে যান, তাহলেও যেন তারা স্বাস্থ্যবিধিগুলো পরিপূর্ণভাবে মানেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে আরো কিছুদিন। ফলে ঈদের উৎসব বা চলাফেরায় কড়াকড়ি কমলেও, সবাইকে নিজের নিরাপত্তার জন্যই স্বাস্থ্য সতর্কতাগুলো মেনে চলতে হবে।
সূত্র : বিবিসি