আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
সম্পূর্ণ অবাস্তব ও দূর্নীতিকে চলমান রাখার বাজেট : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক |
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সম্পূর্ণ গতানুগতিক, অবাস্তব এবং দূর্নীতিকে চলমান রাখার বাজেট । তিনি বলেন, করোনা সংকটের কারণে জাতি আজ এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘বিশেষ করোনা বাজেট’, তা না করে অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে।
শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসা থেকে এক ভার্চ্যুয়াল প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় জানাতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেট জাতিকে সম্পূর্ণ হতাশ করেছে। জাতি আশা করেছিল এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হলো জিডিপির মাত্র ১.৩% মাত্র। অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর চেয়ে অধিক অর্থ অর্জন করতে পারবে না এমন খোঁড়া যুক্তিতে স্বাস্থ্য খাতে অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করাই ছিল প্রত্যাশিত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ৯ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে আমরা সুনির্দিষ্ট পুরুদ্ধার পরিকল্পনা সমৃদ্ধ তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি বাজেট রূপরেখা দিয়েছিলাম। অর্থমন্ত্রী আমাদের সুপারিশ ও দেশের অধিকাংশ শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের অভিমতকে উপেক্ষা করে প্রত্যাশিত ‘অসাধারণ বাজেটের’ স্থলে নিতান্তই একটি ‘সাধারণ বাজেট’ এর ঘোষণা দিলেন। এই বাজেটে করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বাজেটে বর্তমানে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে সেসব প্রকল্পগুলোকেই সরকারের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে বাজেটে দেখানো হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, পরিবহন খাত ও বিদ্যুৎ খাতসহ এমন অনেক খাতে অনেক বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না। প্রস্তাবিত বাজেটে করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় যে কাঠামো থাকা দরকার সেটি পরিপালিত হয়নি। বাজেটের আয় ও ব্যয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বাজেটে কেবল ‘সংখ্যার’ হিসাব মিলানো হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ১১ কোটি টাকা। তন্মধ্যে এনবিআরকেই আয় করতে হবে ৩,৩০,০০০ কোটি টাকা (অর্থাৎ ৫০% এর অধিক প্রবৃদ্ধি) যা বাস্তবতা বিবর্জিত। বাজেটে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কোন সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব নেই। বরং শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে আরও সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা তো কোন সংস্কার নয়। যা ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দিবে। আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়বে।
তিনি বলেন, এ বাজেটে করোনাকালীন সময়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে দিন আনে দিন খায়- এ শ্রেণীর মানুষের জন্য এবং বেকারত্ব মোকাবিলায় কোনো গঠনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাজেটে সীমিত আয়ের বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। করোনায় সাধারণ মানুষের আয়ে ঝুঁকি বাড়লেও সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে বরাদ্দ আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে ০.২% যা মোট বাজেটের ৪.৭ শতাংশ, চলতি বাজেটে ছিল তা ৪.৯%। পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হবে মাত্র ১০০ কোটি টাকা যা নিতান্তই অপ্রতুল। বাজেটে কিছু প্রণোদনার কথা উল্লেখ করলেও ঐসব আর্থিক প্রণোদনা নিতান্তই ব্যাংক লোন। কর্মহীন প্রবাসীদেও দেশে পুনর্বাসন ও আত্মনির্ভরশীল কওে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ বাজেটে। বাজেটে পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিফাই করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।
এই বাজেটে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটের বড় অংশ মেগা প্রকল্পগুলোকে দেয়া হয়েছে যেগুলো এরই মধ্যে দুর্নীতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব প্রকল্পকে বাজেটে আনয়নের প্রয়োজন ছিল না। দুর্নীতির যে ধারা চলমান, সেটাকে অব্যাহত রাখাই এর কারণ বলে আমরা মনে করি। তা ছাড়া কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ এ বাজেটে দেয়া হয়েছে সেটাও দুর্নীতিকে চলমান রাখার আরেকটি প্রয়াস মাত্র। আবাসন খাতের ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার ১০% বাড়তি শুল্কে জমি কেনা ও উন্নয়ন, বিল্ডিং, নগদ টাকা, ব্যাংকে রক্ষিত টাকা এবং স্টক ডিভিডেন্ড, বন্ড ও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে অনৈতিকতাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অথচ করোনা সংকট মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই উন্নয়ন খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেয়া যেত। অর্থমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। বিদ্যুৎ খাতে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এখনও আম্পানের ধকল চলছে। দেশের এমতাবস্থায় এই দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ হ্রাস করা উচিত হয়নি বলে আমরা মনে করি।
কৃষিখাতকে মূর্যায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, কৃষকদের উৎপাদনের উপকরণ মূল্য হ্রাসের তেমন কিছুই বলা হয়নি বরঞ্চ রাসায়নিক সারের মুল্য গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হযনি। ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। এ খাতও যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। কর্মসংস্থান কারিগরি শিক্ষা খাতে আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল। বাজেটে হাতে তৈরি খাবার, গুড়ো দুধ, অন-লাইন খাবার, অন-লাইন কেনাকাটা, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল সেবার ওপর কর প্রায় প্রতিবছরই বাড়ছে। করোনা সংকটকালে অবরোধ অবস্থায় আমরা দেখছি এ সব সেবা কত প্রয়োজনীয়। আমরা অনলাইন কেনাকাটা ও মোবাইল /ইন্টারনেট সেবার বর্তমান ব্যয় বহাল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। ৩০ শে জুনের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এই সংকটকালে এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বাজেট প্রকৃত অর্থে একটি অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। বাজেট জনবান্ধব হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেও লাভ নেই, কারণ জনগণের কাছে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
ডিএন/এনএন/পিএন/আইএস/৬:৪৫-পিএম