শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

গণতন্ত্র রক্ষায় আলোচনায় বসে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিনঃ জনসমুদ্রে খালেদা জিয়া

0-1নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারকে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে নয়াপল্টনের জনসমুদ্রে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সঠিক পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন। তা না হলে কখন জনগণ জেগে উঠবে তা বলা যায় না। আর জনগণ একবার জেগে উঠলে তাদেরকে আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। গণতন্ত্রের জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে। তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তাই তাদেরই এটা করতে হবে। দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধির জন্য সবাই মিলে একত্রে কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ। সবাই মিলেমিশে কাজ করলে সুন্দর দেশ উপহার দিতে পারবো। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। ৫ জানুয়ারির একতরফা ও বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’ বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে। আজকের জনসভায় খালেদা জিয়া ভবিষ্যতেও এই দিনটি পালনের ঘোষণা দেন।

এর আগে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বেলা ১১টার পর থেকেই জনতার ঢল নামে পল্টন ও এর আশপাশের পুরো এলাকায়। নয়াপল্টন, নাইটিঙ্গল মোড়, আরামবাগ, ফকিরাপুল, বিজয়নগর এবং এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। দৃশ্যত বিএনপি অফিসের সামনের বিশাল এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তুলেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। খালেদা জিয়া দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে মঞ্চে উপস্থিত হন। এ সময় নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। বিকেল ৪টার দিকে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। মাবেশে তিনি প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য রাখেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন প্রায় এক বছরের বেশি সময় পর জনসভায় ভাষণ দিলেন। এই সময়ের মধ্যে কেবল গত এপ্রিলে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নেমে কয়েকটি পথসভায় ভাষণ দেন।

বিরোধী দল দমনের সরকার নতুন নতুন আইন করছেঃ
জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার একের পর এক আইন করছে। সংবিধান পরিবর্তন করেছে নিজের স্বার্থে। এই পরিবর্তনে জনগণের ভালোর জন্য কিছু নেই। তিনি বলেন, কেবল ২০১৪ সালের নির্বাচন নয় ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনও পাতানো নির্বাচন ছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৎ​কালীন সেনা প্রধান মইন ইউ আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করে করেছিল।

বর্তমান সরকার ও সংসদ অবৈধঃ
বর্তমান সরকার ও সংসদকে অবৈধ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা কোন বৈধ সরকার না। তারা যা করছে তাও বৈধ না।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যা করে দেশে রাজতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেছেন। এর আগেও একবার চেষ্টা করেছেন একদলীয় শাসন কায়েম করার। এখন আবার করছেন। মানুষ গুম করে, খুন করে রাজতন্ত্র কয়েম করার যে চেষ্টা আপনারা করছেন, তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।’ সমাবেশে তিনি আলোচনায় বসে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই সরকার অবৈধ, এই সংসদও অবৈধ। ৫ জানুয়ারি আমরা কী দেখেছিলাম? সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট অংশ নিয়েছিল। ওই জোটে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সব পরগাছা। তারা ছাড়া আর কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।’ ‘আওয়ামী লীগ বিএনপির জনসভা দেখলে ভয় পায়। এ কারণে তারা আমাদের জনসভা করতে দেয় না’— মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো দিন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়, হবেও না। তাই আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিলেই এই সরকারের জনপ্রিয়তা বোঝা যাবে।’
তিনি আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে বলেন, ‘সঠিক পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন। এটা না হলে কখন জনগণ জেগে উঠবে তা বলা যায় না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার একের পর এক আইন করছে। সংবিধান পরিবর্তন করেছে নিজের স্বার্থে। এই পরিবর্তনে জনগণের ভালোর জন্য কিছু নেই।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক রয়েছেঃ

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা চালানোর পরও আওয়ামী লীগ তাদের গ্রেফতার করেনি।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জঙ্গিদের উত্থানের পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। জঙ্গিবাদ আওয়ামী লীগের তৈরি বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

সিইসি অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীনঃ

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচন কমিশনে যারা আছে তারা অথর্ব, মেরুদ-হীন। তারা আওয়ামী লীগের কাছে, হাসিনার কাছে সাহায্য চায়। তারা নাকি অসহায়। অসহায় হলে পদত্যাগ করুক। এই নির্বাচন কমিশন দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, কেবল ২০১৪ সালের নির্বাচন নয়, ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনও পাতানো নির্বাচন ছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করে করেছিল।

খালেদা জিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি (সিইসি) কি এমন লাটসাহেব হয়েছেন যে দেখা করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘আসলে অবৈধ সরকারের এই সিইসি অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন। তার কথা বলারও সাহস নেই। পৌর নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের চরিত্র জনগণের সামনে আবার প্রমাণিত করেছে।’ এ সময় বিএনিপ চেয়ারপারসন সারাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

সাগর-রুনি হত্যা, মাহমুদুর রহমান ও টকশো প্রসঙ্গ:

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার এখনও হয়নি। তাদের রেখে যাওয়া শিশুর খবর এখন আর কেউ রাখে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। টকশোতে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় বলে মন্তব্য করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ টকশো দেখে। সেখান থেকে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারত। কিন্তু সেগুলো এখন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এসময় তিনি আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, যেখানে জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচন নিয়মিত হতো সেখানে নির্বাচন দিয়ে জয়ী হতে পারবে না বলেই জোর করে দখল করে নেয়। তিনি বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পেয়ে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা জাল ভোট দিয়ে নিজেদের প্রার্থীদের জয়ী করে নেয়।

শিক্ষকদের যথাযোগ্য সম্মান দিতে হবেঃ

তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাদের যথাযোগ্য সম্মান দিতে হবে। শিক্ষকসহ সব ক্যাডারকে অবহেলা করা হচ্ছে। দু-একটা ক্যাডারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বৈষম্য বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে শান্তি আসবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ-আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।