দলীয়ভাবে এবার সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি

1465937168ঢাকা, দেশনিউজ.নেট: প্রথমবারের মতো পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে করার পর এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয়ভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধনীর খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছে কমিশন।

কমিশন সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে সরকারি সুবিধাভোগী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে প্রার্থী হলে মেয়রদের প্রচারণার সুযোগ দেয়া হতে পারে। পৌর ও ইউপি নির্বাচনে মেয়ররা প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটির নির্বাচন একই দিনে করতে চায় ইসি। দুই সিটি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে বছর শেষে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তি করা হবে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব রাজীব আহসান জানান, ভোটের পর নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটির ও ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করারও আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের ২৬ ডিসেম্বর ও কুমিল্লার ৮ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ বছরের ২৯ জুন থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও ১২ আগস্ট থেকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কুমিল্লার ভোট শেষ করতে হবে।

ইসি কর্মকর্তারা আরো জানান, দলীয়ভাবে সিটি কর্পোরেশন ভোটের জন্য নির্বাচনবিধিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে বিধি, ফরম, প্রতীকসহ আনুষঙ্গিক সংশোধনের খসড়াও তৈরি চলছে ইসিতে। বর্তমান ইসির মেয়াদও শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এ সময়ের মধ্যে দু’টি সিটির ভোট শেষ করার কথা ভাবছেন তারাও।

নারায়ণগঞ্জ সিটি: এ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ২৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৭০৬ জন (আগের নির্বাচনের হিসেব অনুযায়ী)। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৯৬ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৬১০ জন।

কুমিল্লা সিটি: এ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ২৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ৯টি। আগের নির্বাচনের হিসেব অনুযায়ী সেখানে ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন । এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৮৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭৪ জন।

ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র আরো জানায়, নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে ২৬ ডিসেম্বর। তাই এর আগে এই সিটির নির্বাচন করতে হবে। আর কুমিল্লা সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। তাই কমিশন আলাদাভাবে না করে একই সঙ্গে এই দুই সিটির নির্বাচন করতে চায়। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শুরুতেই এই দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কমিশন সভায়ই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, এর আগে দেশে ১৯৮৮, ১৯৯৪, ২০০০ সালে চট্টগ্রাম, ২০০২ সালে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, ২০০৩ সালে বরিশাল, সিলেট, ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম, ২০০৮ সালে সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম, ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা, ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর, ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট, ৬ জুলাই ২০১৩ গাজীপুর ও সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটিতে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email