সরকারের ওপর মহলের ইঙ্গিতে বিএনপির ত্রাণ বিতরণে হামলা: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিএনপির ত্রাণ বিতরণে হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাড়ে তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতায় এখন সর্বত্রই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত ল্যাব ও দক্ষ জনবল না থাকায় লক্ষ্য নির্ধারণ করে নমুনা পরীক্ষায় নামতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে ঢের বিলম্ব হচ্ছে। মফস্বল থেকে জেলা সদরের ল্যাবে নমুনা পৌঁছে স্তুপ হয়ে পড়ে থাকছে। ফলে এর রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এতে দেশে আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। মহামারি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয়ভাবে কাজের সমন্বয় নেই। নেই সুনির্দিষ্ট কোনো পলিসিও। ক্ষমতাসীনদের মনোযোগ দুর্নীতি-লুটপাটে। এরা ভাইরাসের রাজনীতিকরণেই ব্যস্ত আছে।’

রিজভী আরো বলেন, ‘দুর্যোগকালীন সময়ে দেশে যখন দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে তখন ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। কিন্তু আমাদের ত্রাণ বিতরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। হামলা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। মামলা- গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। এ বর্বরোচিত হামলা করোনায় আক্রান্ত দেশকে আরো সংকটাপন্ন করে তুলেছে।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসের মরণছোবল থেকে মানুষকে উদ্ধার নয়, বরং সারা দেশে সন্ত্রাস চালিয়ে সরকার নিজেদের লুটপাট ও গদি সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অসহায় মানুষের চিৎকার ও ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার তাদের হৃদয়কে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে না।’

রিজভী বলেন, “করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগকালীন গত ২১ মে সাতক্ষীরা জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার অসহায়, গরীব ও ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে গত ২১ জুন বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী পুত্র উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক রাজিব হায়দারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা দফায় দফায় বর্বরোচিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি মাইক্রোবাসসহ কমপক্ষে ১৫-২০টি মোটর সাইকেল ভাংচুর এবং বেদম পিটিয়ে বহু নেতাকর্মীকে আহত করে। এমপি পুত্রের নেতৃত্বে ন্যাক্কারজনক এ সহিংস হামলার ঘটনাটি সকল পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি মানুষ ক্ষোভ ও ধিক্কার জানায়। হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এ নারকীয় হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করেছি।

অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘কোথায় কে বাধা দিয়েছে আপনারা স্পষ্ট করুন, তথ্য-প্রমাণ দিন। অভিযোগ সত্য হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব’। মানবিক কাজে বাধা প্রদান আওয়ামী লীগের নীতি নয়।

দেশের প্রতিটি মানুষ গণমাধ্যমে ও টেলিভিশনের ফুটেজে দেখেছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কীভাবে ত্রাণ বিতরণের বহরে তাণ্ডব চালিয়েছে। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে দিবানিদ্রা গেলে জানবেন কীভাবে, দেখবেন কীভাবে? দেশের মানুষের ঘোরতর সন্দেহ, এ হামলা সরকারের ওপর মহলের ইঙ্গিতে ও জ্ঞাতসারেই হয়েছে। একারণে তাদের দলের পোষ্য সন্ত্রাসীদের এতো বড় অপকর্মকে আড়াল করতে চাচ্ছেন তারা। তথ্য-প্রমাণ জানার জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা আছে। বিভিন্ন এজেন্সি আছে। স্থানীয় প্রশাসন আছে। জনগণের টাকায় তারা বেতন পাচ্ছেন। কাজেই উক্ত অপকর্মগুলোর তথ্য তো কাদের সাহেবদেরই সর্বপ্রথম জানার কথা। কিন্তু সরকারি বাসভবনে বসে ভিডিও বার্তায় তথ্য-প্রমাণ চাওয়াটা হাস্যকর। এমনিভাবে ইতোপূর্বেও নারায়ণগঞ্জের মহিলা কাউন্সিলর ও মহিলা দল নেত্রী আয়শা আক্তার দীনা এবং ফেনীতে কৃষক দল নেতা আলমগীর চৌধুরী এবং ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন কমান্ডার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে গরিব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে ত্রাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।’

রিভভী বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেককে ত্রাণ বিতরণের সময় গ্রেফতার করে ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ ভয়াবহ দুর্দিনে সরকার যখন বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে ত্রাণ দিচ্ছে তখন বিএনপি প্রকৃত সাধারণ দুস্থ ও অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। আর তাতে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। কোন কোন স্থানে আওয়ামী লীগের বি-টিমের ভুমিকা পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া শুধু নিজের মত প্রকাশের জন্য আইসিটি আইনে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কয়েকদিন গুম করে রাখার পর মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যখনই আমরা জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি, তখন কাদের সাহেব তথ্য-প্রমাণ চান। আওয়ামী জঙ্গিদের লালন পালন, মদদ ও আশকারা দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় শক্তি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসীরা এই দুর্যোগকালেও যে অমানবিক, বর্বর ও নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করছে তা সকল স্বৈরশাসকদের রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। করোনাকালে আওয়ামী লীগ চরিত্র বদলায়নি। ত্রাণ লুট-চুরিতে তারা রেকর্ড করেছে। কয়েকদিন আগেই ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ নেতার গ্যারেজ থেকে ১২০০ বস্তা চাল উদ্ধার হয়েছে। ফলে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ দিতে গেলে বিনাভোটের মিডনাইট সরকারের গাত্রদাহ হওয়াটাই স্বাভাবিক।’

ডিএন/জেএএ

Print Friendly, PDF & Email