শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

বিভিন্ন সংগঠনের শোক: ‘এমাজউদ্দীনের মৃত্যু একটি নক্ষত্রের পতন’

নিজস্ব প্রতিবেদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ)।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক পৃথক বিবৃতিতে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, চরমোনাই পীর সৈযদ মুফতি মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দীন আইউবী এবং ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এ শোক প্রকাশ করেন।
শোকবাণীতে জামায়াত আমীর বলেন, একজন খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশে শিক্ষার বিকাশে তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার ইন্তিকালে জাতি একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীকে হারালো। আমি তার ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জীবনের ভালো কাজগুলো কবুল করুন এবং তাকে উত্তম বদলা দান করুন। তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
শোকবাণীতে চরমোনাই পীর বলেন, বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার ইন্তেকালে জাতি একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীকে হারালো। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জীবনের নেক কাজগুলো কবুল করে তাকে উত্তম প্রদান দান করুন। তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
যৌথ শোক বাণীতে খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ বলেন, মরহুম অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ জাতির বিবেক হিসেবে সব সময় দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করেছেন। চলমান জাতীয় সংকট উত্তরণে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিনি তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও লেখনীর মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজে বিদ্যমান অসঙ্গতি ও অনাচার দূর করার চেষ্টা চালিয়েছেন। রাষ্ট্রের একজন প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ নাগরিক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে সৃষ্ট শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়।
প্রদত্ত যৌথ শোক বাণীতে খেলাফত মজলিস নেতৃদ্বয় মরহুম অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে দু’আ করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এক যৌথ শোকবার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাউদ্দিন আইউবী বলেন, তাঁর ইন্তেকালে আমরা একজন শিক্ষাবিদ ও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীকে হারালাম। একাধারে তিনি ছিলেন শিক্ষক, কলামিষ্ট, সাহিত্যিক ও সাবেক ছাত্রনেতা। মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ১৯৫২ এর পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্রনেতা হিসেবে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে তিনি কারাবরণ করেছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি রাষ্ট্র বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৫০টিরও বেশি বই লিখেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করে। সৃষ্টিশীল গবেষণা ও আলেখ্য রচনার জন্য ‘মহাকাল কৃষ্টি চিন্তা সংঘ স্বর্ণপদক’, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, জিয়া সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন। সমৃদ্ধ জাতি গঠনে ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তাছাড়া গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার পক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল সুদৃঢ়। বিপন্ন গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানুষের অধিকার আদায়ের পক্ষে তাঁর সোচ্চার কণ্ঠ ও বিশ্লেষন মানুষকে আন্দোলিত করেছে। চলমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি প্রথম সারিতে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে তিনি শেষ পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ইন্তেকালের সময় তিনি দুই মেয়ে ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ছাত্রশিবিরের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা ও দিক নির্দেশনা আমরা কখনো ভুলব না। শিবিরের বিভিন্ন স্মারকগ্রন্থে প্রদত্ত তাঁর বাণীসমূহ আমাদের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগেরই স্বাক্ষর বহন করে চলবে। তাঁর ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
আমরা আল্লাহ তায়া’লার নিকট তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

শোকবাণীতে ন্যাপের নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন ব্যবস্থা, পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করেছেন তিনি। এসব ক্ষেত্রে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও প্রখ্যাত।

নেতারা বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যু একটি নক্ষত্রের পতন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা অপূরণীয়। তিনি ছিলেন তার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। দেশের মানুষের মুক্তি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টি ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তার কলম জাতিকে পথ দেখিয়েছে। তিনি মানুষের স্বাধীনতা আর অধিকারে বিশ্বাস করতেন।

তারা আরো বলেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ শুধু শ্রেণি কক্ষের শিক্ষক ছিলেন না। তিনি শ্রেণি কক্ষের বাইরে একজন বৃহত্তর সমাজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি যেটি বিশ্বাস করতেন সেটা চর্চা করেছেন। একইসঙ্গে তার অনুজপ্রতীমদেরও দিক্ষিত করেছিলেন। তিনি অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশ্বাস করতেন।


ডিএন/সিএন/জেএএ/৬:৩০পিএম/১৭২০২০১৮