শিরোনাম :

  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিশ্বকাপের রেকর্ড ৩৩০ রান নিয়ে বুক টান করে লড়ছে টাইগার দল

স্পোর্টস ডেস্কঃ ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই রেকর্ডের খাতা নতুন করে লিখলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে তারা। ওভালে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের হাফসেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে করেছে ৩৩০ রান। এটাই এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২২ রান ছিল এতদিনের সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে নেলসনে স্কটিশরা করেছিল ৩১৮ রান, এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয় নিশ্চিত করা বাংলাদেশ করেছিল ৩২২। রবিবার ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে নিজের প্রথম ম্যাচেই সেটা টপকে গিয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ।

বিশাল এই সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকার (৪২) ও তামিম ইকবালের (১৬) কাছ থেকে পাওয়া ভালো শুরু কাজে লাগিয়ে রান বাড়িয়ে নেন তারা। ১৪২ রান করার পথে সাকিব-মুশফিক গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে সেঞ্চুরির পথে হাঁটলেও পারেননি মুশফিক (৭৮) ও সাকিব (৭৫)। তবে গড়ে দিয়ে যান শক্ত ভিত। যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ ৩৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে। আর মোসাদ্দেক ২০ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করে যান ২৬ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৫ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার তিন বোলার- ইমরান তাহির, আন্দিলে ফেলুকাও ও ক্রিস মরিস প্রত্যেকে পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।

চমৎকার ইনিংস খেলে ফিরলেন মুশফিকঃ সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে আরেকটি আক্ষেপের ‍অধ্যায় খুলে ফিরে গেছেন তিনি প্যাভিলিয়নে। যদিও যাওয়ার আগে খেলে গেছেন চমৎকার এক ইনিংস।

৭৮ রানে আউট হয়েছেন মুশফিক। সাকিব ৭৫ রানে ফিরে যাওয়ার তার কাছে সেঞ্চুরির প্রত্যাশা ছিল সমর্থকদের। যদিও পারেননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। চমৎকার ব্যাটিংয়ে দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত রান বাড়িয়ে নেওয়া মুশফিক আউট হয়েছেন আন্দিলে ফেলুকাওয়ের শিকার হয়ে।

ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন তিনি রাসি ফন ডার ডাসেনের হাতে। ৮০ বলের ইনিংসটি মুশফিক সাজিয়েছেন ৮ বাউন্ডারিতে।

মিঠুনকেও বোল্ড করলেন তাহিরঃ মোহাম্মদ মিঠুনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২১ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি। সাকিবের পর তাকেও বোল্ড করে ফিরিয়েছেন ইমরান তাহির। আউট হওয়ার আগে ২১ বলের ইনিংসে মিঠুন ২ চারের সঙ্গে মেরেছেন ১ ছক্কা।

সাকিবের ঝলমলে ইনিংসের ‘দুঃখজনক’ সমাপ্তিঃ আরেকবার হতাশায় পুড়তে হলো সাকিব আল হাসানকে। আরও একবার হাফসেঞ্চুরিকে যে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারলেন না। অথচ কী চমৎকারভাবেই না শতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ঝলমলে ইনিংসটা পূর্ণতার পেল না দুঃখজনক আউটে। ইমরান তাহিরের বল অফ স্টাম্পে দিকে এগিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন সাকিব।

৭৫ রানে থেমেছেন সাকিব। ৮৪ বলের ইনিংসটি বাঁহাতি ওপেনার সাজান ৮ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। যাতে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও আক্ষেপে হয়েছে শেষ। তাহিরের বল তার ব্যাটের নিচ দিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। আউট হওয়ার আগে মুশফিকের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে গড়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।

সাকিব-মুশফিকের হাফসেঞ্চুরি ঃ বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের স্তম্ভ তারা। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের কাছে প্রত্যাশাও বেশি। সেটা পূরণেই ক্রিজে দাঁড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের দুই সেরা ব্যাটসম্যান। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের আউটের পর রানের চাকা সচল রেখেছেন তারা।

দুজনই পূরণ করেছেন হাফসেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৩তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে প্রস্তুতি ভালো না হলেও মূল মঞ্চে ফিরেছেন তিনি চেনা রূপে। ৫৪ বলে পৌঁছান এই মাইলফলকে।

বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের পরপরই হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিক। এটা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৪তম হাফসেঞ্চুরি। ফিফটি পূরণ করেন তিনি ৫২ বলে।

হাফসেঞ্চুরি হলো না সৌম্যর ঃ দারুণ শুরু হয়েছিল সৌম্য সরকারের। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরির কাছেও চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে পারলেন না, ৪২ রানে আউট হয়ে গেছেন এই ওপেনার।

আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের ঢংয়ে ইনিংস শুরু করেছিলেন সৌম্য। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের নিয়েছেন পরীক্ষা। তবে ক্রিস মরিসের বলে থামতে হয়েছে তাকে। প্রোটিয়া পেসারের শর্ট বল পুল করতে চাইলেও তার গ্লাভসে লেগে বল উঠে যায়। শূন্যে ভাসা বলটি ঝাঁপিয়ে গ্লাভসবন্দী করেন কুইন্টন ডিক।

৩০ বলের ইনিংসটি সৌম্য সাজিয়েছেন ৯ বাউন্ডারিতে। তার বিদায় বাংলাদেশ হারায় দ্বিতীয় উইকেট।

দুরন্ত সূচনার পর তামিম আউট ঃ তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে তারা পূরণ করেছেন ‘ফিফটি’। যদিও এরপর ছন্দপতন তামিমের। এই ওপেনারের আউটে বাংলাদেশ হারিয়েছে প্রথম উইকেট।

বোলিংয়ে এসেই বাজিমাত আন্দিলে ফেলুকাওয়ের। নিজের দ্বিতীয় বলে এই পেসার ফিরিয়েছেন তামিমকে। ওপেনিং দুই পেসার কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিদিকে হতাশ করে রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন তামিম-সৌম্য। ফেলুকাও বোলিংয়ে এসে ভাঙেন তাদের জুটি।

এই পেসারের লাফিয়ে ওঠা বল তামিমের ব্যাটে লেগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে। তার ব্যাট থেকে ২৯ বলে আসে ১৬ রান।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ঃ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে আজ (রবিবার)। উদ্বোধনী ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ওভালের এই ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি মুর্তজা (অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান।

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক), এইডেন মারক্রাম, ফাফ দু প্লেসি (অধিনায়ক), রাসি ফন ডার ডাসেন, ডেভিড মিলার, জেপি দুমিনি, আন্দিলে ফেলুকাও, ক্রিস মরিস, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি, ইমরান তাহির।