শিরোনাম :

  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

‘তিন কিশোরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়’

যশোর প্রতিনিধি।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তিন কিশোরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানতে পেরেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি। 

কমিটির প্রধান পরিচালক সৈয়দ মো. নূরুল বশির বলেন, ঘটনার প্রায় ৬/৭ ঘণ্টা পর আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে তিন কিশোরকে হাসপাতালে নেওয়া হয় মৃত অবস্থায়। 

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহতের পর সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করে, সেই কমিটি শনিবার (১৫ আগস্ট) থেকে কাজ শুরু করে। কমিটির অপর সদস্য হলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এম এম মাহমুদুল্লাহ। 

গত বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহত হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত কিশোর অপরাধী এবং যে সকল কিশোর বিচারাধীন তাদের সংশোধনের জন্য এ ধরনের উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি রাখা হয়।  

কেন্দ্রের কর্মকর্তা মুশফিক আহমেদ দাবি করেন, কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে বিকেলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন রড ও লাঠির আঘাতে ১৭ কিশোর মারাত্মক জখম হয়। 

এর মধ্যে খুলনার দৌলতপুর থানার পশ্চিম সেনপাড়া গ্রামের রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়া গ্রামের নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭) মারা যায়।   

তবে জাবেদ হোসেনসহ আহত কয়েক কিশোর জানায়, কর্মকর্তা এবং বন্দি কিশোররা তাদের লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এতে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। জ্ঞান ফিরলে তাদের একইভাবে আবার পেটানো হয়। এতে হতাহত হয়েছে। 

বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। এর একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলির পুলেরহাটে। যশোর কেন্দ্রে মোট বন্দির সংখ্যা ২৮০ জন বলে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান সৈয়দ মো. নূরুল বশির বলেন, ইতোমধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কিশোরদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। তদন্তের জন্য শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেও গেছেন। এই কমিটি বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।  

‘‘কিশোরদের নির্মমভাবে মারপিটের পরও সময়মতো যদি তাদের হাসপাতালে নেওয়া হতো, তাহলে প্রাণহানির ঘটনা নাও ঘটতে পারতো বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।’’

একই ঘটনার তদন্তে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু লাইছকে প্রধান করে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করে, সেই কমিটিও কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম খান। 

এদিকে, তিন কিশোরকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার উন্নয়ন কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। 

তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, শনিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে আদালত পাঁচ জনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার পরপরই তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। তা চলমান রয়েছে। 

নিহত কিশোর রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিএন/সিএন/জেএএ/৪:৪২পিএম/১৭৮২০২০২০