নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবাই

আবদুল হাফিজ খসরু: 

শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও জীবিকা উপার্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন এবং মানবতার কল্যাণ সাধন। শুধু দক্ষতা থাকলেই হবে না, একজন দক্ষ মানুষের প্রয়োজন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ব্যবহারিক শিক্ষা। এর প্রধান উৎস হচ্ছে ধর্ম। বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম হচ্ছে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ শেখার সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা। এটা অমুসলিম পণ্ডিতগণও স্বীকার করে থাকেন।

পশ্চিমা সেক্যুলার দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার জন্য কোন একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। তাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের উল্লেখযোগ্য অংশ ইসলামী শিক্ষা থেকেই ধার করে নেওয়া। যেমন, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। তবে ফ্রি মিক্সিং সংস্কৃতি, অবাধ যৌনাচার, সুদ, অশ্লীলতা, হারাম খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতির স্বাধীনতা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর আধুনিক ইউরোপ ও সেক্যুলার দেশগুলোতে যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারও প্রায় ১৪০০ বছর আগে ইসলাম তা প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বকে দেখিয়েছে। ইসলামের প্রথম ৪০ বছর পর্যন্ত অর্ধপৃথিবী জুড়ে তা শতভাগ প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তিতে শাসকদের ব্যক্তিগত পদস্খলনের কারণে কোথাও কমতি থাকলেও মোটা দাগে মুসলিম শাসনাধীন দেশগুলো ছিল তৎকালীন তাবৎ বিশ্ব থেকে নাগরিক বান্ধব সর্বোত্তম রাষ্ট্রব্যবস্থা।

বাংলাদেশ ৯২ ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এখানকার মুসলিম শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ শেখাতে হলে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। যেখানে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি স্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন ছিল এবারের ২০২৩ কারিকুলামে তা সংকুচিত করা হয়েছে। বোর্ড পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানে বাংলার মুসলিম শাসকদের ইতিহাস ও অবদান খাটো করা হয়েছে। বিবর্তনবাদের মত ইসলাম বিরোধী মতবাদ শেখানো হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের লেখা সংকুচিত করা হয়েছে।

আত্মপরিচয়ের গভীর সংকটে ফেলা হয়েছে আগামী প্রজন্মকে। বাংলাদেশ নামক বর্তমান ভূখণ্ডটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে আছে একমাত্র ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে। সেখানে নতুন প্রজন্মকে তা ভুলিয়ে দিতে বসেছে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান কারিকুলাম প্রণেতারা।

বাংলাদেশের বর্তমান কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের শুধু মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে না, শুধু ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে না, বরং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যে ধরণের উদ্ভাবক, গবেষক ও নেতৃত্ব দরকার তা সরবরাহে পুরোপুরি ব্যার্থ হবে।

নতুন শিক্ষা কারিকুলামে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলোঃ- ১) ভাষা ও যোগাযোগ, ২) গণিত ও যুক্তি, ৩) জীবন ও জীবিকা, ৪) সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, ৫) পরিবেশ ও জলবায়ু, ৬) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৭) তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ৮) শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ৯) মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ১০) শিল্প ও সংস্কৃতি প্রভৃতি।

এগুলো এ বছর থেকে শুরু হয়ে ধাপে ধাপে ২০২৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এ বছর প্রাথমিকে ১ম ও ২য়, মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে চালু করা হয়েছে। এ জন্য সম্পূর্ণ নতুন পাঠ্যবই রচনা করা হয়েছে। ৯ম শ্রেণিতে কোন বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয় নাই। একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে তা করতে হবে।

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের এতদিন ৯ম শ্রেণি থেকেই পিউর সাইন্সের বিষয় যেমন পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান শেখানো হতো। এখন তার বদলে মাত্র একটি বিষয় হিসেবে তাদেরকে বিজ্ঞান শিখতে হবে। ব্রিটিশ কারিকুলামের ইংলিশ মিডিয়ামের সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এতদিন বড় ধরণের পার্থক্য ছিল না। নতুন কারিকুলামে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারবে না। ফলে সামর্থবানরা ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে বেশি ঝুঁকবে।

নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সরকার এমনভাবে তৈরী করতে চায় যেন প্রতিটি সাবজেক্ট পড়ে জীবনভিত্তিক কিছু স্কিল অর্জন করে এবং বাস্তব জীবনে কিছু করতে পারে। কারিকুলাম প্রণেতাদের মতে পুরোনো সিলেবাসে শুধু তত্বীয় বিষয় শেখানো হতো এবং তাতে শিক্ষার্থীরা ঐসব শিক্ষা তাদের জীবনের সাথে মেলাতে পারতো না। যার কারণে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ের উপর। এজন্য পিউর বিজ্ঞান ও গণিতকে কমিয়ে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

যারা দ্রুত শিক্ষা শেষে কিছু করে খেতে চায়, তাদের জন্য তো পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থা দেশে রয়েছে। কিন্তু মূল ধারার শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য হওয়া উচিত বড় গবেষক, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, অর্থনীতিবিদ প্রভৃতি বানানো। যাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর একটা জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতা আসবে। মূল কারিকুলাম তো কিছু স্কিল শেখানোর উদ্দেশ্য হতে পারে না।

নতুন কারিকুলাম কিছু দক্ষ শ্রমিক ছাড়া জাতিকে তেমন কিছু দিতে পারবে না। এই ধরণের কারিগরি শিক্ষা আমাদেরকে বড় গবেষক, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, প্রযুক্তিবিদ উপহার দিতে ব্যর্থ হবে। এখনই আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের ম্যানেজমেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ারদেরকে রাশিয়া, ভারত ও চীন প্রভৃতি দেশ থেকে ভাড়া করে আনতে হচ্ছে। এই কারিকুলাম পরিবর্তন না করলে আগামীতে দেশ পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক নেতৃত্বও হয়তো বাইরে থেকেই আমদানী করতে হতে পারে!

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের তত্ত্বীয় বিজ্ঞান (Theoretical Science) ও প্রায়োগিক বিজ্ঞানের (Applied Science) পার্থক্য বুঝাতে ব্যার্থ হবে নতুন কারিকুলাম। স্কুল শিক্ষার্থীরা বর্তমানে যে গণিত ও পিউর বিজ্ঞান পড়ে তার সরাসরি প্রায়োগিক ক্ষেত্র না থাকলেও তাদের ব্রেনকে আগামী দিনের গবেষক হিসেবে প্রস্তুত করতে সুবিধা হয়। যে শিক্ষার্থী গণিতে যত ভালো সে তত বেশি গবেষণা ও প্রোগ্রামিংয়ে ভালো করতে পারে। গণিতের সবচেয়ে বড় প্রায়োগিক ক্ষেত্র হলো পদার্থ বিজ্ঞান। প্রকৌশল বিদ্যার মেরুদণ্ডই হচ্ছে গণিত। কিন্তু নতুন কারিকুলামে উচ্চতর গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানকে সংকুচিত করে একটি বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে মূলধারা শিক্ষাব্যবস্থার স্নাতক পাশ তরুণদের মধ্যে বর্তমান বেকারত্বের হার ৩৪ শতাংশ। এছাড়াও যারা কর্মরত আছে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের কাজের ক্ষেত্র আর অর্জিত ডিগ্রীর সামঞ্জস্য নেই। অর্থ্যাৎ পড়েছে সমাজবিজ্ঞানে চাকুরি করছে মার্কেটিংয়ে, পড়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং চাকুরি করছে ব্যাংকে। কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার অবমূল্যায়নের এরকম অসংখ্য উদাহারণ দেয়া যাবে। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের মধ্যে বেকারত্ব নেই বললেই চলে। তাই বলে নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিকের মূল ধারার শিক্ষাকে কারিগরি শিক্ষায় রূপান্তরিত করা অদূরদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

একটি দেশের সবাইকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স মাস্টার্স পড়ানোর দরকার নাই। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টির কারখানা। এখানকার শিক্ষকরা এক একজন বড় বড় গবেষক হবেন। তারা জ্ঞানের নতুন নতুন শাখায় বিচরণ করবেন। ছাত্ররা শিক্ষকদের কাজে সহযোগী হবে, নিজেরা আগামী দিনের গবেষক হিসেবে প্রস্তুত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সব শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবে যারা মূলধারার মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে ভালো রেজাল্টধারী।

উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায় মূল ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় সবাই উচ্চতর ডিগ্রী নিতে পারে না। এখানে আসতে হলে স্কুল লেভেলে ভালো করতে হয়। তা না হলে টেকনিক্যাল ধারায় লেখাপড়া শেষ করতে হয়। মূল ধারার লেখাপড়ার মানের সাথে কোন প্রকার কম্প্রোমাইজ চলে না বা চলতে দেওয়া হয় না। কারণ এই ধারার শিক্ষাই একটি দেশের বড় বিজ্ঞানী, বড় গবেষক, বড় দার্শনিক, বড় অর্থনীতিবিদ, বড় ডাক্তার, বড় আলেম তৈরী করে। কিন্তু আমাদের নতুন কারিকুলাম স্কুল লেভেলেই দু’ধারাকে প্রায় এক করে দিয়েছে।

গত দেড় দশকে শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক কাটাছেড়া করা হয়েছে। পিএসসি ও জেএসসি নামে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা শুরু করে দিয়ে আবার বাতিলও করা হয়েছে। এ দু’টি পাবলিক পরীক্ষা উপলক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যে মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছিল তার ক্ষতিপূরণ কি কারিকুলাম প্রণেতারা দিতে পারবেন ? প্রচলিত কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপদ্ধতির পরিবর্তে চালু হয়েছিল সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী এ পদ্ধতিতে প্রশ্ন করার যোগ্যতা এখনও অর্জন করেননি ৩৮ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। গত এইচএসসি পরীক্ষায় একাধিক বোর্ডের সৃজনশীলে করা প্রশ্নপত্র নিয়ে যে সাম্প্রদায়িক বিতর্ক উস্কে দেয়া হয়েছিল তা তো সকলেরই জানা। নতুন কারিকুলামে ‘শিখনকালীন এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন’ নামে নতুন যে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে আগেরটার মত তাও যে ব্যার্থ হবে বলার অপেক্ষা রাখে না।

নতুন শিক্ষা কারিকুলামে পরীক্ষায় জিপিএ ভিত্তিক ফলাফল থাকছে না। থাকছে না কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ও এমসিকিউ পদ্ধতি। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই থাকছে না। বাকী শ্রেণিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও এখনকার মতো শুধু কাগজ-কলমনির্ভর পরীক্ষা হবে না।

শিখনকালীন ও সামষ্টিক এই দুই ভাগে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের তথ্য অ্যাপভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। এক ভাগের মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই, শিখনকালীন নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আরেক অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।

চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান) কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন, বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে। অবশিষ্ট পাঁচটি বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন বেশি হবে (৭০ শতাংশ সামষ্টিক ও ৩০ শতাংশ শিখনকালীন)।

সামষ্টিক মূল্যায়নের ফলাফল তিনটি শ্রেণিতে প্রকাশ করা হবে।
১। পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর
২। অন্তর্বর্তী বা মাধ্যমিক স্তর ও
৩।পারদর্শী স্তর।

পরীক্ষা পদ্ধতির এই আমূল পরিবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাস নয় শুধু এই উপমহাদেশের জন্যও প্রথম। মোবাইল এপ্সভিত্তিক এই ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। যেসব উন্নত দেশকে অনুসরণ করে বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি সাজানো হয়েছে তাদের সক্ষমতার সাথে আমাদের সক্ষমতার ফারাক বিশাল। বিশেষ করে শিক্ষকদের উপযুক্ত না করে নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে তা বুমেরাং হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ এখানে শিক্ষকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।

অথচ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের একটি বড় অংশই প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে গেছেন। গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে কয়েকদিন ধরে সাড়ে ৩ লাখের বেশি শিক্ষককে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে। অথচ মাঠপর্যায়ের চিত্র হচ্ছে সময়সূচি না জানা ও ইন্টারনেট গতির স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে অধিকাংশ শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে পারননি। যারা অংশ নিয়েছেন তারাও ঠিকমত মনোযোগী ছিলেন না, কারণ প্রশিক্ষণটি ছিল অনলাইনে একমুখি প্রশিক্ষণ। গত ৬ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষকদের সরাসরি প্রশিক্ষণ চলছে। তার ফলাফল কি হবে তাও অতীতের চিত্র থেকে আমরা ধারণা করতে পারি। এরপর হবে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ।এছাড়াও কিন্ডারগার্টেন স্কুলসমূহের ৫ লাখ শিক্ষক রয়েছেন যাদেরকেও এখনো প্রশিক্ষণের পরিকল্পনায়ই আনা হয়নি।

পর্যবেক্ষকদের মতে পুরো ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ও গুরুত্বের ঘাটতি রয়েছে যা স্পষ্ট। একধরণের অপ্রস্তুত অবস্থায় নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। গিনিপিগের মত একের পর এক পরীক্ষা নিরীক্ষার যেন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের ভবিষ্যতকে একধরণের অনিশ্চয়তার দিকেই যেন ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

এখানে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র নষ্ট করা হয়েছে। মাদ্রাসা কারিকুলামে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যবই সংযুক্ত করা হয়েছে। বইয়ের পাঠ্যবস্তুতে ইসলামী মূল্যবোধ, বাঙালী মুসলমানদের ইতিহাস ও ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানা হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতির এমন আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে যা বহন করা সক্ষমতা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কারোরই এই মুহূর্তে নেই। বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এভাবে একের পর এক বিতর্ক উস্কে দিয়ে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণেতারা দেশি/বিদেশী কাদের এসাইনম্যান্ট বাস্তবায়নে নেমেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর হবে না। অবিলম্বে এই কারিকুলাম সংশোধিত না হলে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তার দায় কেউই এড়াতে পারবে না।

Print Friendly, PDF & Email