চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাবী ছাত্রীদেরকে মুখ খোলা রাখতে হবে

চবি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার হলে ছাত্রীদের চেহারাও কান দৃশ্যমান রাখার নির্দেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। শৃঙ্খলা কমিটির ৫১ তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য সকল ধরনের পরীক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আওতায় থাকবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এবং চবির অধিভুক্ত সকল কলেজ।

গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরীক্ষা কমিটির সভায় এছাড়াও আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয় সেই বৈঠকে।

পরীক্ষা কমিটির সভার সিদ্ধান্তগুলো হলো:-
সিদ্ধান্ত বিবিধ (খ)
পরীক্ষার হলে কমিউনিটিভ ডিভাইস যথা ইলেকট্রনিক ডিভাইস যথা সিমযুক্ত ঘড়ি, সিমযুক্ত কলম সিমযুক্ত ক্যালকুলেটর ও সিমযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস এবং মোবাইল ফোন নিয়ে কোন শিক্ষার্থী যেন প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল ধরনের বিভাগ/ ইনস্টিটিউটের সভাপতি/পরিচালক/কলেজ অধ্যক্ষগণের পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।

সিদ্ধান্ত (গ)
কোন পরীক্ষার্থী মোবাইল ফোন অথবা সিমযুক্ত অন্যান্য ডিভাইসের মাধ্যমে অসদুপায় অবলম্বন করলে, উক্ত শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন, সিমযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস জব্দকৃত নকলের স্ক্রিনশট নিয়ে অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীর খাতার সাথে সংযুক্ত এবং উক্ত খাতায় লাল কালি দিয়ে মার্কিং করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার হলের পরিদর্শক গণকে নিশ্চিত করনের বিষয়ে সকল ধরনের বিভাগ/ ইনস্টিটিউটের সভাপতি/পরিচালক/কলেজ অধ্যক্ষগণের পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউটের সভাপতি /পরিচালক /কলেজ অধ্যক্ষগণ পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে স্বীকারোক্তিমূলক
লিখিত ভাবে আবেদন নিয়ে মোবাইল ফেরত প্রদান করবেন।

সিদ্ধান্ত (ঘ)
পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর দুই কান ও মুখমন্ডল অবশ্যই দৃশ্যমান রাখার ব্যাপারে পরীক্ষার্থীদেরকে নির্দেশনা প্রদান এবং এ বিষয়ে সকল ধরনের বিভাগ/ ইনস্টিটিউটের সভাপতি/পরিচালক/কলেজ অধ্যক্ষগণকে
এবং পরীক্ষা কমিটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে পরীক্ষা কমিটি সুপারিশ করেন। উল্লেখ্য, ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মহিলা শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে যেতে পারে।

সিদ্ধান্ত (ঙ)
পরীক্ষা অসুদপায় অবলম্বন করা শিক্ষার্থীদের জন্য শাস্তির ধরন;

যেহেতু পরীক্ষায় অসুদপায় অবলম্বনে সর্বনিম্ন শাস্তি X+0 অর্থাৎ শুধুমাত্র রিপোর্টকৃত(চলতি)সনের সকল কোর্সের পরীক্ষা বাতিল সেহেতু কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে দায় অভিযুক্ত হলে উক্ত পরীক্ষার্থীকে চলতি সনের আর কোন পরীক্ষায় অর্থাৎ পরবর্তী কোর্সসমূহে অংশগ্রহণে বিরত রাখার জন্য সকল ধরনের বিভাগ/ ইনস্টিটিউটের সভাপতি/পরিচালক/কলেজ অধ্যক্ষগণের পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।
এছাড়াও কোন শিক্ষার্থী অসৎভাবে অবলম্বনের দায়ে অভিযুক্ত হলে উক্ত বিষয়টি ওই দিন পরীক্ষার হল /হলসমূহে প্রচারের জন্যও কমিটি সুপারিশ করছে।

সিদ্ধান্ত (চ)
পরীক্ষার্থীদের যথা সময়ে পরীক্ষা গ্রহণে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে লক্ষ্যে পরীক্ষা শৃঙ্খলা কমিটি সভায় আলোচনা ক্রমে প্রতি ০৩ মাস অন্তর অন্তর অর্থাৎ পরবর্তী তৃতীয় মাসের শেষ সপ্তাহের সভা আহ্বানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে জব্দকৃত খাতা, রিপোর্ট ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সমূহ উক্তদিন পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও পরিচালক
কলেজ অধ্যক্ষদের অবহিত করার জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।

এদিকে, ছাত্রীদের চেহারা ও কান খোলা রাখার আদেশ দেয়ার সুপারিশে অনেকের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পর্দা করেন এমন অনেক শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মর্নিং নিউজকে বলেন,
‘নকল প্রতিরোধের নাম করে মুখমণ্ডল ও উভয় কান খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কানের মধ্যে ডিভাইস রেখে নকল করতে পারে এই অজুহাতে কান খোলা রাখার কথা বলা হচ্ছে। নকল প্রতিরোধই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে পর্দার ক্ষতি না করে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করা যায়। পরীক্ষার হলে কাউকে চেক করতে হলে তার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে, তার যথাযথ সম্মান, মানবিক মর্যাদা, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার ঠিক রেখে করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু পর্দা পালনকারীদের আলাদাভাবে টার্গেট করা অমানবিক, অপমানজনক, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থী।’

Print Friendly, PDF & Email