দেশের মানুষ একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করবে : মানববন্ধনে পেশাজীবী নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৭ই জানুয়ারি ‘একতরফা নির্বাচন’ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে পেশাজীবী নেতারা বলেছেন, দেশে আজকে মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হচ্ছে ইতিহাসের ন্যক্কারজনক জুলুম-নির্যাতন। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে আবারও একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ সেই নির্বাচন হতে দিবে না এবং প্রতিহত করবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে এক মানববন্ধনে পেশাজীবী নেতারা এসব কথা বলেন। ‘মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার’ দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। বিভিন্ন পেশার ২২টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দেশের অর্থনীতি সবকিছু অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করছেন। তাহলে আজকে নির্যাতন নিপীড়ন কেনো? এবারও প্রহসনের নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এটা তো সমঝোতার নির্বাচন। কিন্তু দেশের মানুষ এটা হতে দিবে না। জনগণের পালস বুঝুন। তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিন।

বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে আইনের শাসনের করুন অবস্থা। আওয়ামী লীগ করলে কোনো মামলা নেই। কিন্তু যদি বিরোধী দল করেন তাহলে মামলা হবে এবং জামিন হবে না! এটাই হলো আইনের শাসন। বিচারকদের কাছে আবেদন- দেওয়ালের লিখন পড়ুন আর সংবিধান মোতাবেক দায়িত্ব পালন করুন, জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে। আজকে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের না পেলে তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কোন আইনে এটা আছে? মনে রাখবেন উপর থেকে আল্লাহ তায়ালা কিন্তু দেখছেন।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত রায় বলেন, যে ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা শেখ হাসিনা করেছেন তা বিশ্বের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছেন। আপনাকে হয়তো নোবেল পুরস্কার দিতে পারে! আপনার জায়গা হবে হিটলার মুসোলিনির পাশে।
জিয়া পরিষদের সভাপতি ডা. আবদুল কুদ্দুস বলেন, দেশের মানুষ ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করবেন। সুতরাং সরকারকে বলবো- ভাগাভাগির নির্বাচন বন্ধ করুন। নচেত আপনাদের বিচার জনগণ করবে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে জনগণের কোনো উৎসাহ নেই। ইনশাআল্লাহ জনগণ সেই নির্বাচন প্রতিহত করবে। নির্বাচন কমিশনের যদি সাহস থাকে ইলেকশন ফিক্সিংয়ের জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন। আজকে নিম্ন আদালতে যা হচ্ছে এগুলো নির্লজ্জ। ২৮শে অক্টোবরের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ নেতাদের জামিন দিচ্ছে না। প্রধান বিচারপতিকে বলবো এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলবো- আপনারা জনগণের টাকায় চলেন। কোনো মানবাধিকার লংঘন করবেন না। তা না হলে শুধু দেশেই নয়, জাতিসংঘের মিশনে নিষিদ্ধ হবেন।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, দেশে কুশাসন ও দুঃশাসনের মূল হোতা শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া এবং ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ এ ধরনের নির্বাচন চায় না। ইনশাআল্লাহ প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নেই। আমরা সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে চাই। এজন্য যা করা দরকার পেশাজীবীরা তা করবে। যেমনটি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ডা. মিলনকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে নিম্ন আদালতে গুম খুন হওয়া ব্যক্তিদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে বলার ভাষা নেই। তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান।
ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু আজকে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নেই। জনগণের ভোট ডাকাতি করে সরকার ক্ষমতা জবরদখল করে রেখেছে। ইনশাআল্লাহ এই সরকার নির্বাচন করতে পারবেনা।

এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে, স্বাধীন বাংলাদেশে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের জন্য রাজপথে নেমে পেশাজীবীরা আন্দোলন করছেন। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। কারাবন্দি এবং বাইরে আন্দোলনকারীরা চরম কষ্টে জীবন যাপন করছে। আমি জনগণকে বলবো আপনারা সকলে রাজপথে নেমে আসুন। আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করুন।

বিএসপিপির সাবেক আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, এডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, মো. মহসীন, এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী, সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের ড. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক আবদুল করিম, অধ্যাপক মেজবাহ, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, অধ্যাপক আনিছুর রহমান, অধ্যাপক ড. আবু জাফর, অ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) প্রকৌশলী মাহবুব আলম, এডভোকেট আশরাফ জালাল মনন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম, ড্যাবের ডা. শহীদুর রহমান, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email