শিরোনাম :

  • শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫

স্ত্রী সন্তানসহ করোনা আক্রান্ত এক সাংবাদিকের তিক্ত অভিজ্ঞতা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২৯ মার্চ সকালে হঠাৎ প্রচণ্ড কাশি। দুপুর পার হতেই জ্বর। আগের দিনও কোনো প্রকার লক্ষণ ছিল না। মৌসুমি জ্বর-কাশি ভেবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। কিন্তু কাশি প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। সঙ্গে জ্বরও। শরীরের তাপমাত্রা থাকে ১০৩-১০৪ ডিগ্রি। করোনা সন্দেহে আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করে চিকিৎসা সহায়তা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চার দিন ফোন করেও যোগাযোগ করতে পারেননি আইইডিসিআরের সঙ্গে।

অবশেষে উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১২ দিন পর নিজ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা করান। এতে তার শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তার সংস্পর্শে থাকা স্ত্রী-সন্তানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ অভিজ্ঞতা জাতীয় দৈনিকেের ৪০ বছর বয়সী এক সাংবাদিকের। যিনি ডিআরইউর সাবেক নেতা।

জানা গেছে, আক্রান্ত সাংবাদিকের করোনার উপসর্গ দেখা দিলেও তার স্ত্রী-সন্তানের কোনো লক্ষণ ছিল না, এখনও নেই। তিনজনই উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই সাংবাদিক রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাস করেন। তিনি জানান, ২৮ মার্চ রাতে অফিস শেষে তিনি মগবাজারে পূর্বপরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কাছাকাছি অবস্থানে থেকে কথাবার্তা বলেন। তার মাধ্যমেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করছেন।

আক্রান্ত সাংবাদিক জানান, ২৯ মার্চ কাশি-জ্বর শুরু হওয়ার পর ১ এপ্রিল এর প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। মোবাইল ফোনে পরিচিত এক চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা পরামর্শ নেন। পরামর্শ মেনে ঠান্ডা-জ্বরের ওষুধ সেবন করেন চার দিন। এরপরও জ্বর-কাশি ভালো না হওয়ায় আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করতে থাকেন। চার দিনে একাধিকবার ফোন করেও আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি। কখনও ফোন নম্বর বন্ধ ছিল, কখনও ব্যস্ত দেখিয়েছে, কখনও রিং বাজলেও ফোন ধরেননি কেউ। এরই মধ্যে ৪ এপ্রিল যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে তার এক আত্মীয় চিকিৎসকের কাছে যান এবং লক্ষণগুলো জানান। চিকিৎসক এক্স-রেসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বলেন। পরে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে জ্বর-কাশি হয়েছে উল্লেখ করে কিছু ওষুধ লিখে দেন। এতে করোনার ভয় দূর হয় তার। স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফেরেন।ল

কিন্তু তারও তিন দিন পর জ্বর-কাশি আরও বেড়ে যায়। আবারও আইইডিসিআরে ফোন করেন করোনা পরীক্ষা করাবেন বলে। এবারও ব্যর্থ হলেন। ভাবলেন, এভাবে ঘরে বসে থাকলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। ৯ এপ্রিল একাই ছুটলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন সেখানে। ১০ এপ্রিল সকালে রিপোর্ট হাতে পান এবং জানতে পারেন তিনি করোনা আক্রান্ত।

ওই রাতেই উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। একই সঙ্গে বাসায় অবস্থান করায় তার স্ত্রী-সন্তানকেও করোনা সন্দেহে নেওয়া হয় হাসপাতালে। যদিও তাদের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। কিন্তু পরীক্ষার পর তাদের শরীরেও করোনা পজিটিভ আসে। তিনজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ওই সাংবাদিক জানান, তার শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার অষ্টম দিন ছিল গতকাল শুক্রবার। অবশ্য এর আগেই করোনায় আক্রান্ত তিনি। পাঁচ-ছয় দিন ধরে জ্বর নেই। কাশিও কমেছে। স্ত্রী-সন্তানের জ্বর, কাশি, হাঁচিসহ কোনো লক্ষণই ছিল না, এখনও নেই। তিনি বলেন, কাশি-জ্বরের প্রথম দিনই যদি নিজেকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখতাম, তাহলে হয়তো তারা রেহাই পেত করোনা থেকে। কারও করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্র আলাদা ঘরে থাকার পরামর্শ দিলেন এই সাংবাদিক।