শিরোনাম :

  • শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

করোনার বিস্তার, হটস্পট এখন গাজীপুর

নিউজ ডেস্ক |

বাংলাদেশের জেলাগুলোয় করোনাভাইরাসে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে ঢাকা মহানগরীর পর এতদিন নারায়ণগঞ্জ জেলার অবস্থান হলেও এখন সেই স্থান নিয়েছে গাজীপুর।

গত কয়েকদিনে গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআর।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, গাজীপুরে সংক্রমিত এই রোগীদের একটি বড় অংশ নারায়ণগঞ্জ থেকে গেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এছাড়া ঢাকা বিভাগের মধ্যে নরসিংদী এবং কিশোরগঞ্জ জেলাতেও নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মিজ ফ্লোরা বলেছেন, নতুন করে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৩১% রোগীর অবস্থান ঢাকায়। এরপরেই রয়েছে গাজীপুর।

আইইডিসিআর এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে সর্বমোট করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২,১৪৪ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগেই পাওয়া গেছে ১৩৭০ জন।

এরমধ্যে, ঢাকা মহানগরীতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৭৪০ জনের মধ্যে, নারায়ণগঞ্জে ১৮৯ জনের মধ্যে এবং গাজীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ জনে। গাজীপুরে আক্রান্তের এই সংখ্যা বেড়েছে বিগত কয়েকদিনে।

গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্বেগের মধ্যে আছেন গাজীপুরের শিমুলতলি এলাকার বাসিন্দা রেজিনা ফারুক।

এর পেছনে দুটি কারণকে তিনি দায়ী করেছেন। প্রথমত, গত ২৬শে মার্চ থেকে চলমান সাধারণ ছুটিতে অনেকেই গাজীপুরে যাওয়া আসা করেছেন।

এছাড়া চৌঠা এপ্রিল বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টস কর্মী কাজে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গাজীপুরে প্রবেশ করেছেন।

সম্প্রতি এই বিপুল পরিমাণ বহিরাগতদের কাছে থেকে গাজীপুরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন মিসেস ফারুক।

নিজ এলাকা করোনাভাইরাসের হটস্পটে রূপ নেয়ায় মিসেস ফারুক প্রতিনিয়ত চিন্তায় থাকেন। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “আমাকে তো বাজার করতে বাইরে যেতে হয়। অনেক আতঙ্কে থাকি। মনে হয়, এই বুঝি ধরলো।”

এই উদ্বেগের কারণে বাড়িতে কাজের লোক থেকে শুরু করে বহিরাগতদের প্রবেশ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। নিজেও খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হন না।

নানা অজুহাতে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নানা অজুহাতে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মানুষের চলাচল বন্ধ হচ্ছেনা

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এ ধরণের সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা।

অথচ করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬শে মার্চ থেকে দেশব্যাপী কার্যত লকডাউন চলছে।

এরপর ৫ই এপ্রিল থেকে শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকার ভেতরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক।

এছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলা থেকে চলাচলেও দেয়া হয় কঠোর নিষেধাজ্ঞা।

এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী অবস্থান নিলেও মানুষের চলাচল পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি।

মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন মি. রানা।

তিনি বলেন, “জরুরি পণ্য ও জরুরি সেবার চলাচল অনুমোদিত হওয়ায় অনেকেই সেই অজুহাত দেখিয়ে চলাচল করছে। কেউ চিকিৎসার কথা বলছেন, আত্মীয়কে দেখতে কিংবা আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু বেশিরভাগই কোন প্রমাণ দেখাতে পারছেন না।”

আবার যারা নিজেদেরকে জরুরি সেবার সাথে নিজেদের জড়িত বলে দাবি করছেন, কিন্তু প্রমাণ দেখাতে পারছেন না, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা গণমাধ্যমের কাছে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন তাদের জন্য বিষয়টি বেশ বিব্রতকর হয়ে পড়ে বলে তিনি জানান।

লকডাউন পরিস্থিতিতে জরুরি পণ্য পরিবহন অনুমোদিত।
লকডাউন পরিস্থিতিতে জরুরি পণ্য পরিবহন অনুমোদিত।

মি. রানা বলেন, নিয়ম লঙ্ঘনকারী এই মানুষদের একটি বড় অংশই শিক্ষিত ও সচেতন শ্রেণীর মানুষ।

“মানুষ যদি নিজ থেকে বাড়িতে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সহযোগিতা না করেন, তাহলে শুধু আইন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন।” বলেন মি. রানা।