তাহলে ধন্যবাদ “করোনা”

আবদুল আউয়াল ঠাকুর?

পরীক্ষা মানেই বুক দুরুদুরু করা এক আশঙ্কার নাম।দিন যতই ঘনিয়ে অসে ততই নানা চিন্তা মাধায় আসে।পরীক্ষা না দিলে এগুবার কোন পথ নেই আবার পরীক্ষা দেয়া মানেই এক ঝুঁকির মধ্যে পড়া। পরীক্ষায় প্রথম হবেন বলে একসময় যে মনে করত তার মধ্যে যেমনি ভীতি কাজ করে যে পাস কি ফেল করবে তারমেধ্যেও এর কোন ব্যতিক্রম হয়না। শুধু যে শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষা দেন তাতো নয় জীবনের সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে । প্রতিটিতেই রয়েছে নম্বর পাবার আয়োজন। কে কত পেল সেটিই শেষ পর্যন্ত বিবেচ্য বিষয় হয়। সে রাজনীতিই হোক পরিবারই হোক যাই হোক না কেন। পরীক্ষাহীন জীবন নেই।

কারণ এগিয়ে যাবার জন্যই পরীক্ষা দিতে হয়।
করোনা এবকটি রোগ ।এটি কেন হয়েছে কিভাবে ঠিক হবে এনিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখি গবেষণা সবই হচ্ছে । করোনাকালীন বাস্তবতা দেশে দেশে আলাদা। আমাদের দেশে লক্ষণীয় অসতর্কতার মধ্য দিয়ে এটি প্রবেশ করলেও বাস্তবতা হচ্ছে ,আমরা এর মধ্য দিয়েই চলছি। এটিও লক্ষণীয় যে আমাদেরদেশে এটি র আক্রমণ ও ক্ষতির পরিমাণ ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এর সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে।অমাদের শিশুরা জন্মের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করে। শিশুর শরীর গঠনে মায়ের দুগ্ধ সবচেয়ে সেরা খাবার। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিশুই মাতৃস্নেহে বড় হয়েছে বিধায় তাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।

শহরে অনেক শিশুই অতিরিক্তি টিকাগ্রহণ করে ফলে তারাও বাড়তি প্রতিরোধ ব্যবস্থার আওতায় থাকে।তৃতীয়ত আমাদের সমাজে এখন পর্যন্ত টিকে থাকা মূল্যবোধের কারণে জীবনের জীবনীশক্তি ক্ষতিকারক উশৃঙ্খলতা কোন স্থায়ি অবস্থানে নেই। সবমিলে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকার করণেই আলোচ্য রোগটি অন্যান্য দেশের তুলনায় এদশে অনেক কম প্রভাব বিস্তার করেছ। একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রখেনা করোনাকলীন সময়ে দেশের অর্থনীতি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাড়িয়েছে । অনাকাঙ্খিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে।তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং হচ্ছে দেশের শিক্ষা খাত। নীরব ঘাতক শিক্ষা নামক জাতির মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে চুড়মার করে দিচ্ছে। বলা বোধহয় অত্যুক্তি হবে না যে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তটি জাতির শিক্ষা ধংসের বিবেচনায় আরো একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান মাধ্যমিক বাতিল করে একদশক পর্যন্ত চালু করতে চেয়েছিল তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একবার স্নাতকে অটোপাশ দেয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে গণ পাশের অয়োজন করা হয়েছিল। শিক্ষার মান রক্ষায় এটি মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এখন পর্যন্ত সে ক্ষত সারেনি। দেশের সর্বত্রই এখন শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ।

এমনকি আমলাদের পর্যন্ত ইংরেজি শিখতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগেও এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা প্রতিপক্ষের ইংরেজি বুঝতে না পেরে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী শর্তে সম্মতি দিচ্ছে। এহেন অজস্র ঘটনার নতিজা এখন বাংলাদেশে রয়েছে যে টাকা গুনতে পারা আর বর্ণমালা জানা লোকের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। অনেক অশিক্ষিত স্বল্প শিক্ষিতরা তাদের সাধারণ কাজ চালিয়ে নেবার জন্য শিক্ষিত লোক খুঁজছে। যেভাবে টাকা এসেছে সেভাবে তো শিক্ষা অসে না। শিক্ষা অর্জণ করতে হয় । পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার মান নির্ধারক।
আমাদের দেশে বিনে পরীক্ষার মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে কোন নজির না থাকলেও এবারে সেই খাবাপ উদারহণটি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। বাসে টার্মিনালে ষ্টেশনে অফিসে সর্বত্র যদি স্বাভাবিক নিয়ম ও কথিত স্বাস্থবিধি মেনে চলা যায় তাহলে পরীক্ষার বেলায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের বেলায় সেটি অকার্যকর কেন? কোন যুক্তিতে। দেশে কি অবকাঠামোর এতই সংকট যে পরীক্ষা নেয়ার মত যোগ্য জায়গা নেই? যদি পরিদর্শকের সমস্যা হয় দেশের অফিস আদালত থেকে সেখানে নেয়া যেতে পারে। ক্লাস রুম বাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ চালুতে সমস্যা থাকার কোন কারণ নেই।
সস্তা জনপ্রিয়তা অথবা কতিপয় বখাটেদের স্বার্থ রক্ষার্থে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনমিনি খেলা কতট যৌক্তিক হবে অবশ্যই সে ভাবনার সুযোগ এখনো রয়েছে।শিক্ষার বয়ঃসন্ধীর এই পর্যাযের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের বিবেচনাতেই শিক্ষা খাত নিয়ে ইতিবাচক ভাবনার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। করোনাকাল নিঃসন্দেহে এক কালো তিলক হিসেবে থাকবে তবে অবশ্যই তা থেকে শিক্ষাকে মুক্ত রাখা জাতীয় বিনির্মাণের জন্যই অপরিহার্য্য।

লেখক ঃ সিনিয়র সাংবাদিক

Print Friendly, PDF & Email