আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
এখনও কোনো আয়মূলক কাজ নেই ১৭% পরিবারের: গবেষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক।
করোনাভাইরাস আমাদের অর্থর্নীতিকে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে দেশের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী হঠাৎ করে কর্মহীনহয়ে পড়েছিল, বিশেষত দরিদ্র এবং নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষগুলো। বিআইজিডি ও পিপিআরসি’র, যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রভাব এতদিন পরেও খুব কম মানুষই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। ফলে এখনো ১৭% পরিবারের কোনো আয়মূলক কাজ নেই বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকার হাজার হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, প্রথমে এপ্রিল মাসে এবং দ্বিতীয়বার জুন মাসে।
আজ একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন এই উপাত্তগুলো উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক কাজ হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবং যে কোনো পেশায় নারীদের ওপর পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যেমন জুন মাসেও অর্ধেকেরও বেশি নারী গৃহকর্মী কোনো কাজ খুঁজে পায়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারি শুরু হওয়ার একমাস পর, এপ্রিলে মাসে গ্রামে ৫০% এবং বস্তি এলাকার মাত্র ৩২% পরিবার কোনোরকম আয়মূলক কাজে জড়িত ছিল। লকডাউন তুলে দেয়ার পর অনেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছে, তাই জুন মাসে এর হার যথাক্রমে ৮৩% ও ৮৪% এ উন্নতি হয়েছে। তবে অনেকে কাজ ফিরে পেলেও তাদের আয় তেমন একটা বাড়েনি। মহামারির শুরুতে তাদের মাথাপিছু গড় আয় অনেক নেমে এসেছিলো, জুন মাসে সেখান থেকে তাদের আয় সামান্যই বেড়েছে, যা এখনো প্রাক-মহামারি পর্যায়ের অনেক নিচে। এখনো ১৭% পরিবারের কোনো আয়মূলক কাজ নেই।
গবেষণায় আরো বলা হয়, আয় যে এখনো কম সেটা বোঝা গিয়েছি তাদের খাবারের উপাত্ত থেকে। জন প্রতি খাওয়ার খরচ করোনাভাইরাস আঘাত হানার পরপর আগের চেয়ে অনেক নিচে নেমে এসেছিলো। জুন মাসে সেখান থেকে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। জুনেও প্রায় ৩০% পরিবার অর্থাভাবে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলো, আবারও করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে এই ক্ষেত্রে উন্নতি খুব সামান্য। করোনার আগে প্রায় সবাই তিন বেলা খেত, জুন নাগাদ বস্তি এলাকায় ১১% ও গ্রামে ৬% পরিবার তিন বেলা খেতে পারছিল না, ঢাকায় এই হার ১৫%। বেশিরভাগ শহর ও বস্তি এলাকার পরিবারগুলো মার্চ থেকে কোনো মাংস বা দুধ খেতে পারছে না। সবকিছু মিলে ব্যাপকভাবে তৈরি হয়েছে হিডেন হাঙ্গার, বা গোপন ক্ষুধা। এই অবস্থা শিশু ও ছোট ছেলে-মেয়েদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
করোনাভাইরসের প্রভাবে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এপ্ৰিল মাসের জরিপে দেখা গেছে, ভালনারেবল নন-পুওর বা প্রায় দরিদ্র, যাদের মাথাপিছু আয় প্রাক-করোনাকালীন সময়ে দারিদ্রসীমার ওপরে। কিন্তু মিডিয়ান আয়ের নিচে ছিল, তাদের মধ্যে ৭৩% এর আয় দারিদ্রসীমার অনেক নিচে চলে এসেছিল। আমরা তাদের বলছিলাম বাংলাদেশ নব্য-দরিদ্র। জুন মাসেও এই নব্য-দরিদ্রেদের প্রায় সবার আয় ছিল দারিদ্রসীমার নিচে। এই নব্য-দরিদ্রদের হিসাবে ধরলে, বর্তমানে বাংলাদেশের দারিদ্রের হার হয় ৪২%।
শহরের বস্তি এলাকায় করোনার অর্থনৈতক প্রভাব হয়েছে আরো মারাত্বক। শহরে খাবারের বাইরেও অন্যান্য বাধা খরচ, যেমন বাড়িভাড়া, বিভিন্ন বিল, যতায়াত খরচ অনেক বেশি। এসব খরচ মেটাতে না পেরে শহরের দরিদ্ররা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। যেমন ঢাকার ১৬% ও চট্টগ্রামের ৮% বস্তি এলাকার মানুষ অন্য জেলায় চলে গেছে। এই গবেষণা থেকে এটা পরিষ্কর, এই মহামারি আমাদের দেশে দারিদ্রের বিস্তার ও প্রকৃতি দুটোই পাল্টে দিচ্ছে।
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, লোকজন কাজ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার জন্য তাকে একটা পরিবেশ পেতে হবে যেখানে সে সাহস পাবে। আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য নতুন ন্যাশনাল মুড প্রয়োজন।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, আমরা আমাদের গবেষণা থেকে কর্মহীনতার অন্যতম যে ফলাফল পেয়েছি তা হলো ফেমিনাইজেশান। নারীপ্রধান কর্মক্ষেত্র যেমন গৃহকর্মী খাত, সেখানে নারীরা কর্মহীনতার শিকার হয়েছে ব্যাপকভাবে। শুধু তাই নয়, আমরা দেখেছি, যেখানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে, সেখানেও এই সময়ে নারীদের অবস্থা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় বেশি খারাপ।
ডিএন/এলএন/জেএএ/৭:৩পিএম/১৮৮২০২০২৬