• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

করোনায় ৯৬ ভাগ পরিবারের গড় উপার্জন কমেছে: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক।
করোনার কারণে ঘরে থাকার নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে ৯৬ ভাগ পরিবারের গড় উপার্জন কমে যায় বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা সংস্থা-আইসিডিডিআরবি এ গবেষণা পরিচালনা করে।
বুধবার গবেষণার ফল গণমাধ্যমে সরবরাহ করে আইসিডিডিআরবি।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোভিড-১৯ এর জন্য দেয়া ঘরে থাকার নির্দেশের (লকডাউনের) কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো বিশেষত মহিলারা অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা,পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি গবেষক দল এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট,অষ্ট্রেলিয়া যৌথভাবে গ্রামীণ মহিলা ও তাঁদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অতিমারী এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে অষ্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং এটি দোহার্টি ইন্সটিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া এর অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, মার্চের শেষ দিক থেকে মে ২০২০ইং পর্যন্ত প্রায় দুই মাসের ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে এবং মহিলাদের ওপর স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

বিশে^র অনেক দেশের মতোই কেভিড-১৯ প্রতিরোধকল্পে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস ঘরে থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে চলমান গবেষণা নেটওয়ার্কের আওতায় গবেষক দল ২,৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর লকডাউনের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে (১৬০ টাকা অথবা ১.৯০ ইউএস ডলার/প্রতিজন/ প্রতিদিন) চলে গিয়েছিল। অধিকন্তু, পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোনো এক বেলা আহার না করে ছিলেন ।

গবেষণা ফল অনুযায়ি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে। মহিলাদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাঁদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। উদ্বেগের বিষয় এই যে, মহিলাদের মধ্যে যারা স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন; তাঁদের অর্ধেকের বেশী লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

আইসিডিডিআরবি’র ইমিরেটাস বিজ্ঞানী ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি বলেন, আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলাদের এবং তাদের পরিবারের উপর কোভিড -১৯ অতিমারীর প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব নিরুপন করা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারী-বান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে।

লকডাউনের প্রভাবের ব্যাপারে বলতে গিয়ে, ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শান্ত রায়ান পারিচা, বলেন, লকডাউনের পূর্বের এবং লকডাউন থাকা অবস্থায় পরিবারগুলো কিভাবে চলছিল- তা তুলনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, তাঁরা লকডাউনের সময় অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক দিয়ে বিশেষ চাপের মধ্যে ছিলেন।

ডিএন/এলএন/জেএএ/১০:৪০পিএম/২৬৮২০২০৩৩

Print Friendly, PDF & Email