শিরোনাম :

  • রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

দেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে দেড় হাজার: বিপিও

নিজস্ব প্রতিবেদক।

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ১ হাজার ৫০০ মানুষ মারা গেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) গবেষণা প্রকল্প বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)।

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের দ্বাদশ ‘কোভিড-১৯ গ্রাফিক্সে’ এই তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।

বিপিও দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে প্রতি সপ্তাহের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে এই তথ্যচিত্র প্রকাশ করে আসছে। ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনসহ ২৫টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপিও জানায়, গত ২১ থেকে ২৭ জুনের মধ্যে দেশে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ১৯৮ জনের মৃত্যুর তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ২০৬ জন। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরে পড়ে। এরপর প্রথম দুই সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর কোনো খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি। কিন্তু ২২ থেকে ২৮ মার্চের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর পরের সপ্তাহগুলোতে পর্যায়ক্রমে ৬৩, ১০৬, ১২০, ১১৪, ৯৩, ৫০, ৬৭, ৪৮, ৭৩, ১৫৪, ২০৬, ২০৫ এবং সর্বশেষ সপ্তাহে ১৯৮ জন মিলে মোট ১ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫১ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এরপর ঢাকায় ৩৩৮, খুলনায় ১৮৫, বরিশালে ১৭০, রাজশাহীতে ১৪৮, সিলেটে ৮৩, রংপুরে ৭০ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৫ জন মারা গেছেন করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে।

বিপিও তাদের গবেষণায় করোনা মহামারী ঘিরে সংঘটিত বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার তথ্যও তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ৮৪টি ঘটনায় ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ ছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনা বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১১ হাজার ২৮ জনকে।

এ সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২১৭টি নির্যাতন ও সামাজিক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে মহামারীকে কেন্দ্র করে। বিভিন্ন জেলায় ১৭২টি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৪১ শতাংশ, লকডাউনে বাড়ি বা মেস বাড়া কমানো, টিউশন ফি কমানোর দাবিতে ১৬ শতাংশ, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৬ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা ও হাসপাতাল সুবিধা নিশ্চিতের দাবিতে ৪ শতাংশ, প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে ২ শতাংশ প্রতিবাদ হয়েছে।

ঢাবি সিজিএসের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সরকার নিয়মিত কোভিড-১৯ আপডেট দিচ্ছে। কিন্তু সেখানে কোভিডের লক্ষণ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। মানুষ মনে করছে, কোভিডের উপসর্গ নিয়ে বহু সংখ্যক মারা যাচ্ছে। এতে তাদের মাঝে ভয় কাজ করছে। ২৫টি ওপেন সোর্স পর্যালোচনা করে আমরা এই তথ্যই পেয়েছি।’ কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়ে ফেসবুকে গুজব বা মানুষের ভুল ধারণাগুলো নিরসনে এই গবেষণা সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।

এ গবেষণায় কিছু দুর্বলতা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে অনেকে ভর্তি হতে না পেরে মারা যাচ্ছে। সেটা গণমাধ্যমে ওভাবে আসছে না। ফলে সামগ্রিক তথ্য এ গবেষণায় ওঠে এসেছে বলা যাবে না। সরকারের উচিত বেসরকারি হাসপাতালে আরও নজর দেওয়া। কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু মানেই যে করোনা ভাইরাস পজিটিভ বিষয়টি এমন নয়। এদের অনেকের মৃত্যুর পর নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে।

ডিএন/সিএন/জেএএ