এবি পার্টির ইফতারে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের সম্মেলন
ট্রাম্পকে কাতারে হামলার আহ্বান জানিয়েছিলেন সৌদি বাদশা
দেশনিউজ ডেস্ক।
কাতারে হামলা চালানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন সৌদি বাদশা সালমান। কিন্তু ট্রাম্প সৌদি বাদশার সেই আহ্বানে সাড়া দেননি।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত একটি ম্যাগাজিনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালে কাতার অবরোধের সময় সৌদি বাদশা সালমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেশটিতে হামলার আহ্বান জানান। কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেননি ট্রাম্প।
এখবর প্রকাশিত হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাতার। দোহা বলছে, রিয়াদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোই প্রমাণ করে কাতারে হামলার আহ্বানের খবর সত্য।
২০১৭ সালের জুন থেকে সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত হচ্ছে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি’র সদস্য। সৌদি আরব নিজেকে এ পরিষদের মোড়ল মনে করে এবং আশা করে এ পরিষদের সদস্য সব দেশ পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে রিয়াদের সঙ্গে শলাপরামর্শ বা সমন্বয় করে চলবে। কিন্তু কাতার সৌদি আরবের এ মনোভাবের সরাসরি বিরোধিতা করেছে এবং কুয়েত ও ওমানও কাতারের সঙ্গে যুক্ত হয়।
সৌদি আরবের ইরান বিরোধী কর্মকাণ্ড ও পশ্চিম এশিয়ায় হস্তক্ষেপে কাতার সহযোগীতা না করায় সম্পর্কের অবনতি ঘটা শুরু হয়।
বিশেষ করে ২০১৭ সালের মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে আরব ও বেশ কিছু মুসলিম দেশের সম্মেলনের পর ইরান বিরোধিতার মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এর কিছুদিন পর ইরান বিরোধী একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে সৌদি সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামদ আলে সানি ইরানকে আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি হিসেবে অভিহিত করে বলেন ইরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ ও ভালো সম্পর্ক বজায় রয়েছে।
খ্যাতনামা বিশ্লেষক সাইমন হ্যান্ডারসন এক নিবন্ধে বলেছেন, সৌদি ও কাতারের মধ্যকার উত্তেজনার একটি বড় কারণ হচ্ছে ইরানের সঙ্গে কাতারের ঘনিষ্ঠতা এবং এ দু’দেশই সৌদি নীতির তীব্র বিরোধী। তিনি বলেন, ইরানের ব্যাপারে কাতারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আরব দেশগুলোর জোটের মাধ্যমে ইরানভীতি ছড়ানোর সৌদি চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কাতারের সৌদি বিরোধী অবস্থান রিয়াদের কাছে এতোটাই অসহ্যকর হয়ে দাঁড়ায় যে তারা কাতারে হামলা চালানোর জন্য আমেরিকাকে অনুরোধ করেছিল। গত ৬ আগস্ট মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসির নিবন্ধে এ কথা ফাঁস করে দেয়া হয় যে রিয়াদ, মানামা, কায়রো ও আবুধাবি ২০১৭ সালে কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করার পর সৌদি রাজা সেসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টেলিফোন করে কাতারের ওপর সামরিক হামলা চালানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সে প্রস্তাবে রাজি হননি।
ইরানভীতি ছড়িয়ে দেয়া এবং কাতারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর যুদ্ধবাজ সৌদি যুবরাজ সালমান কেন সামরিক পন্থায় অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করেছিলেন সেটাই এখন প্রশ্ন।
প্রকৃতপক্ষে যুবরাজ সালমান রাজার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। এ কারণে যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি সৌদি জনগণ ও প্রশাসনে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ সামরিক শক্তি হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেছেন। ঠিক একই উদ্দেশ্যে তিনি ২০১৫ সালে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। এরপর ২০১৭ সালে কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের পর যুদ্ধ বাধাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেননি।
ডিএন/আইএন/জেএএ/১১:২এএম/১০৮২০২০৮