ভাত কতটুকু খাওয়া উচিৎ?

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক :
এই দুঃসময়ে আমাদের সবাইকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের হিসাব করতে হবে । সেটি হলো, ভাতের হিসাব ।
ছোট বেলায় আমার মা কে দেখতাম ভাত রান্নার জন্য একটা পাতিলে মুঠি হিসাব করে চাল নিতেন ।  তারপর সবটুকু চাল থেকে আবার এক মুঠি অন্য একটা পাতিলে আলাদা করে তুলে রাখতেন । বিপদের সময় তোলা চাল নয়, সেটা ছিল ফকিরের চাল । বাড়িতে যখন ফকির আসতো তখন আমরা ভাই বোন সেই তোলা চাল থেকে মুঠি করে কিংবা বাটিতে তুলে ভিক্ষা দিতাম ।  আমার সব কয়টি ভাই বোনের মধ্যে আমাদের বড় বোনটির মায়া ও দয়া সবচেয়ে বেশি । আমরা ফকিরকে চাল দিয়ে সাথে সাথেই বিদায় করে দিতাম কিন্তু আমার এই বোনটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে কিছুক্ষন গল্প করতো । জিজ্ঞেস করতো, আপনার বাড়ি কোথায় গো ? বাড়িতে কে থাকে ? বাচ্চা -কাচ্চা কয়টা ? সারাদিন ভিক্ষা করে যে চাল পান, তা দিয়ে সবার খাওয়া হয় কিনা ? ইত্যাদি ..ইত্যাদি ..।
এইসব প্রশ্ন শেষে যার প্রতি বেশি মায়া হতো তাকে আবার পুরোনো ভাত-তরকারি দিয়ে দিতো । তারপর একসময় দেখলাম মা যখন আমার এই বড় বোনটিকে ভাত রান্না করতে বলতো সে ভাতের পাতিলে চাল নেয়ার পর সেখান থেকে দুই -তিন মুঠি চাল ফকিরের পাতিলে রেখে দিতো, আমি দেখে ফেললে, মৃদু হাসি দিয়ে বলতো, “চুপ, কাউকে বলিসনা, একটু করে ভাত কম খেলে এমন কিছু হবে না”আমার বড় আপুর কথা আসলেই সত্যি ।
যেদিন সে একটু সামান্য কম চাল দিয়ে ভাত রান্না করতো, সেদিনও আমাদের সবার ঠিকই খাওয়া হয়ে যেত । কম খেয়েছি বলে কখনো মনে হয়নি ।
এই ভাতের গল্প কেন করছি ? কারণ চল্লিশ বছর ভাত খেয়েছি কিন্তু কোনদিন ভাতের হিসাব করিনি I জানা ছিল না একজন মানুষের আসলে কতটুকু ভাত খাওয়া প্রয়োজন । কিছুদিন আগে সেই হিসাবটা জানলাম । ভাত কম খাওয়া উচিত সেটা জানি কিন্তু একজন মানুষের আসলে ঠিক কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত সেটা দাড়ি-পাল্লা দিয়ে ওজন করে হিসাব করে জেনেছি চল্লিশ বছর পর ।
কার কাছে জানলাম সেটা বলি । মেলবোর্ন শহরে আমি যে ক্লিনিকে প্রেকটিস করি সেখানে একজন অস্ট্রেলিয়ান ডায়েটিশিয়ান কাজ করেন । তিনি আবার মনাস ইউনিভার্সটির পুষ্টি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ।  তার সাথে একদিন কফি রুমে বসে গল্প করছিলাম ।
নিজের কৌতুহল থেকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আমার মত একজন মানুষের সারাদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত ? তিনি আমার বয়স ও ওজন হিসাব করে জানালেন, আমি সারাদিনে ভাত খেতে পারবো মাত্র ৭০ গ্রাম । তার মানে প্রতি বেলায় মাত্র ৩৫ গ্রাম ভাত ।  তিনি জানালেন এর চেয়ে পরিমানে বেশি ভাত হলো, শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও অপচয়।
তার কাছে ভালো করে জানলাম, ডায়াবেটিস রোগী হলে দিনে একবেলার বেশি ভাত খাওয়া ঠিক নয় এবং সেটা অবশ্যই মাত্র ৩৫ গ্রাম ।
এখন আসুন আমরা জানি ৭০ গ্রাম ভাত পরিমানে কতটুকু ? একটা চায়ের কাপ ভাত দিয়ে পূর্ণ করলে যে পরিমান, সেটাই হলো ৭০ গ্রাম ভাত । তার মানে হলো দিনে দুই বেলা ভাত খেলে, প্রতি বেলায় আমাদের সঠিক পরিমান ভাত হলো, চায়ের কাপে, আধা কাপ । এর বেশি যে পরিমান ভাত আমরা খাই সেটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক ও অপচয়।
(তবে এখানে একটা জিনিস একটু জানতে হবে যে যারা অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করেন ও ভারী কাজ করেন যেমন রিকশার ড্রাইভার, তাদের জন্য ভাতের পরিমান হলো ১৫০-২৫০ গ্রাম, বাকি সবার ভাতের পরিমান গড় প্রতি ৭০-৯০ গ্রাম I আর সবজির কোন হিসাব নেই, পরিমান মত খেলেই হবে, মাছ অথবা মাংস হলো ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম, মানে বড় মাছ এক পিস্ অথবা এক টুকরা মুরগি)
আমি এখানে যা লিখেছি,সেটি বিজ্ঞান সম্মত ও সত্যি । আপনার বিশ্বাস না হলে, ভালো ভাবে পড়াশুনা করে যাচাই করতে পারেন । এই জিনিসটা জানার পর আমাদের নবীর খাওয়া -দাওয়া নিয়ে জানার চেষ্টা করলাম ।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানলাম ।
১. আমাদের নবী বেশির ভাগ সময়, শুধু মাত্র ক্ষুধা লাগলে খেতেন I আমাদের মত নিয়ম করে তিন-চার বেলা খেতেন না ।  সোম ও বৃহস্পতি বার রোজা রাখতেন ।
২ .তিনি যে খাবার কিনে আনতেন অথবা কেউ উনাকে কিছু খাবার উপহার দিলে সেটি তিন ভাগে ভাগ করতেন ।
মনে করুন একজন উনাকে এক লিটার দুধ দিলো, উনি ঐ দুধ টুকু তিন ভাগ করতেন ।
একভাগ ফাতিমা অথবা হালিমার জন্য, এক ভাগ আনাস অথবা আবু হুরাইরার জন্য আর নিজের ভাগ থেকে মাত্র এক চুমুক দিয়ে রেখে দিতেন, বলতেন, “যখন ক্ষুধা লাগবে তখন খাবো”। তার মানে খাবার হবে তিন ভাগ, একভাগ নিজের, একভাগ আত্মীয় স্বজন আর এক ভাগ প্রতিবেশীর ।
৩. নবী বলতেন, “তোমরা কখনো পেট ভরে খাবে না, তিনি বলেছেন, আমাদের পাকস্থলীতে এক ভাগ থাকবে বাতাস, একভাগ খাবার ও একভাগ তরল”
পরবর্তীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক্স রে ও এনাটমি এইসব জানার পর দেখা গেলো সত্যিই আমাদের পাকস্থলীতে উপরে একটা অংশ আছে যার নাম “ফান্ডাস”, সেখানে শুধু বাতাস থাকে আর নিচের দিকের অংশটির নাম হলো, “পাইলোরাস” যেখানে শুধু তরল থাকে।  চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এই দুই অংশ কখনো খাবার দিয়ে পূর্ণ করতে নেই ।
Print Friendly, PDF & Email