নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘এখন কথা বলতে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি শঙ্কা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হচ্ছে কি না।’

তিনি বলেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর হাল্লা রাজা দেশের মানুষের জিব কেটে দিয়েছিলেন যাতে তারা কথা বলতে না পারে। আমরা কি হাল্লা রাজার দেশে বাস করছি?’

বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অভিজিৎরা (ব্লগার অভিজিৎ রায়) নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। আর এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্র আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ। ব্লগারদের প্রসঙ্গে পাল্টা কথা শুনতে হচ্ছে—আপনাদেরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ধর্মবিশ্বাস মানে যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। মানুষ মানুষকে কেন তার জন্য হত্যা করবে? যে সরকার নিজেকে গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে দাবি করে, সেই সরকারের আমলে এগুলো শোভা পায় না।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান নারায়ণগঞ্জে গণপিটুনিতে বেশ কয়েকজনকে মেরে ফেলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘গণপিটুনিতে মানুষের মৃত্যু হলে মনে হয় যেন কারো কোনো দায় থাকে না। এ ধরনের ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় আনতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’
পরে গণপিটুনিতে এভাবে মানুষ মারার কারণ হিসেবে মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ অবস্থা একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিনের অসংগতি, ঘাটতি, আইনের শাসনের অভাব, আইনের সাহায্য নিতে হয়রানি, বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

আলোচনায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়াটকিনস মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ তুলে ধরেন। তবে একই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সেমিনারে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মতন্ত্র ও মানবাধিকার: এ সময়ের বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক রোকেয়া চৌধুরী।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রিয়াজুল হক। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন- মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সহযোগী সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন প্রমুখ।