শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫

বিবিসির প্রতিবেদন

খালেদা জিয়া উঠতে পারছে না, বসতে পারছে না, খেতে পারছে না

নিউজ ডেস্ক |

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে অভিযোগ তুলেছে, সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে সবচেয়ে ভাল সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিরোধীদল বিএনপির নেত্রীর অসুস্থতা এবং চিকিৎসাকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না-এই অভিযোগ দলটি এখন জোরালোভাবে তুলছে। দলটি উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়ারও চিন্তা করছে।

খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন সর্বোচ্চ আদালত থেকে খারিজ হয়েছে কিছুদিন আগে। এই আবেদন করা হয়েছিল তাঁর চিকিৎসার বিষয়কে কেন্দ্র করে।

তাঁর দল বিএনপি উন্নত চিকিৎসা দাবি করে আসছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতি দিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সেলিমা ইসলাম
খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সেলিমা ইসলাম

খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলামসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে তাঁর সাথে সর্বশেষ দেখা করেছেন গত ১৬ই ডিসেম্বর।

সেলিমা ইসলাম বলছিলেন, তাঁর বোন খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে না।

“উনার অবস্থাতো খুবই খারাপ। উঠতে পারছে না, বসতে পারছে না, খেতে পারছে না। বা হাতের আঙুলগুলো বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো, এখন ডান হাতের আঙুলগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে।”

পরিবারের সদস্যদের মতো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও অভিযোগ করেছে যে, খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না এবং তাঁর অসুস্থতা এবং উন্নত চিকিৎসার বিষয়কে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না।

আসাদ্দুজ্জামান খান, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদ্দুজ্জামান খান, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেছেন, বিষয়টাতে অসত্য তথ্য দিয়ে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“বাংলাদেশে সরকারের সবচেয়ে আধুনিক হাসপাতাল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল। সেই হাসপাতালে একটা কেবিনে তিনি আছেন। যেখানে চিকিৎসার সব সুবিধা তিনি পাচ্ছেন।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি: খান আরও বলেছেন, “সব ধরণের চিকিৎসক যাদের তাঁর প্রয়োজন, সবার চিকিৎসা তিনি পাচ্ছেন। এমনকি তিনি যাদের কাছে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বা তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, তাদেরকেও মাঝে মাঝে ডেকে এনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কাজেই তাঁর চিকিৎসায় সরকার বা কারাকর্তৃপক্ষ কোনো গাফিলতি করছে-এমন কথা অবান্তর। এধরণের বক্তব্যের কোনো যুক্তি নেই।”

গত পহেলা এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তাঁর পরিবার এবং বিএনপির প্রশ্ন রয়েছে।

তবে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক বলছিলেন, খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা স্থিতিশীল আছে এবং তিনি ভাল আছেন।

“উনি যে অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিলেন, তার চেয়ে এখন ভাল অবস্থায় আছেন। এবং উনার শারিরীক অবস্থার কোনো অবনতি হয় নাই। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তাঁর যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।”

এখন বিএনপি তাদের নেত্রীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে রাজনৈতিক এবং আইনগতভাবে এগুতে চাইছে। দলটি খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, তাদের নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে তারা দিনের পর দিন তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরছেন। কিন্তু সরকার গতানুতিক কথা বলা ছাড়া তাদের উদ্বেগকে আমলে নিচ্ছে না বলে তারা মনে করেন।

“তিনি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। এখনই উন্নত চিকিৎসা দেয়া না হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমরা সরকারকে বার বার বলছি। আগে চিঠি দিয়েছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না।”

তিসি আরও বলেছেন, “আমরা রাজনৈতিক এবং আইনগতভাবেও এগুবো।”

পরিবার এবং বিএনপি খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার কথা বলে আসছে।

তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, তারা পরিবারের পক্ষ থেকে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাতে চান। কিন্তু তাদের এই দাবি সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“সেতো সাধারণত বিদেশে চিকিৎসা করতো।সেজন্য আমরা পরিবার পক্ষ থেকে তাঁকে লন্ডনে পাঠিয়ে চিকিৎসা করাতে চাই। তাহলে ভালো হবে। এখানে হাসপাতালেতো ভাল চিকিৎসা হচ্ছে না।”

তারা এটাও বলছে যে, শেষপর্যন্ত খালেদা জিয়া কোথায় চিকিৎসা নেবেন-সেটা তাঁর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে।

কিন্তু পরিবারের সদস্যরা যখন দেখা করেন, তখন খালেদা জিয়া কোনো মতামত দিচ্ছেন কিনা—এই প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলছিলেন, “সে এখনও কোনো মন্তব্য করে নাই। আমরাই তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে চাচ্ছি। সেটা আমরা তাঁকে বলেছি। সে কোনো মন্তব্য করে নাই।”

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা করানোর যে বক্তব্য তাঁর পরিবার এবং বিএনপি দিচ্ছে। সেজন্য তাঁর জামিনে মুক্তি প্রয়োজন এবং সেটা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয় বলে দলটির নেতারা মনে করেন।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, চিকিৎসকরা অন্য কোথাও চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো মতামত দেননি।

“আমাদের দেশে যারা তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তারা যদি মনে করেন যে, আমাদের পক্ষে আর সম্ভব না। তাঁকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়া দরকার। সেই প্রয়োজন হলে আদালত রয়েছে। আদালত যদি সিদ্ধান্ত দেয়,তখন আমরা ব্যবস্থা নেবো। এখনতো চিকিৎসকরা বলছেন না যে তাঁর আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার। যেটা আমাদের কাছে নেই।”

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলার ৩৫টিতেই তাঁর জামিন আছে। জিয়া চ্যারিটেবল এবং অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির দু’টি মামলায় তাঁর ১৭ বছরের সাজা রয়েছে এবং এই দু’টি মামলায় তিনি জেলে রয়েছেন।