শিরোনাম :

  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই

সাত সকালেই এল শতাধিক মৃত্যুর খবর

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই।  একদিনে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত দুটোতেই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে সোমবার। ওই দিন (২৬ জুলাই) পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে দেশে চলতি বছরের ১৯ জুলাই ২৩১ জনের মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। নতুন মৃত্যু নিয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯ হাজার ৫২১ জনে। আর চলতি জুলাই মাসের ২৬ দিনেই করোনায় প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ১৮ জনের। যা মহামারিকালে এক মাসে মৃত্যুতে সর্বোচ্চ। এদিকে নতুন করে রেকর্ড সংখ্যক শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ১৯২ জন। এর আগে এ বছরের ১২ জুলাই সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ১৩ হাজার ৭৬৮ জন।

সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জন। জুলাই মাসের এই কয়েকদিনে মোট শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৯ জন। যা ইতিপূর্বের কোনো মাসে এত শনাক্তের রেকর্ড নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৫২ জন এবং এখন পর্যন্ত ১০ লাখ ৯ হাজার ৯৭৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঈদের ছুটির পর দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে একদিনে সর্বোচ্চ। ৬৩৯টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৩ হাজার ৩১৬টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৫০ হাজার ৯৫২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫ লাখ ৬ হাজার ২৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৪৭ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪১ জন এবং নারী ১০৬ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন ১৩ হাজার ৩৪০ জন এবং নারী মারা গেলেন ৬ হাজার ১৮১ জন।

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে আছেন ২ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ৭২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৬১ জন, রাজশাহী বিভাগের ২১ জন, খুলনা বিভাগের ৪৬ জন, বরিশাল বিভাগের ১২ জন, সিলেট বিভাগের ১৪ জন, রংপুর বিভাগের ১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের আছেন ৫ জন। ২৪৭ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছন ১৬৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ জন, বাসায় মারা গেছেন ২৬ জন এবং হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে ১ জনকে।

এদিকে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিনে দেশের মোট শনাক্তের ৫২ দশমিক ৩৪ শতাংশ রোগী রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯৫৩ জন। এই বিভাগে শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯৫ জন। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৭ জন। শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ৯০৮ জন। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। রংপুর বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৬৭৮ জন। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। খুলনা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৮৬ জন। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৮৪১ জন। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৬৪ জন। শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

করোনার নতুন হট স্পট ১১ জেলা: দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হট স্পট হয়ে উঠেছে ১১ জেলা। এসব জেলায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করেছে। এসব জেলায় তিন সপ্তাহ আগে শনাক্ত হার সর্বোচ্চ ৪৫ ও সর্বনিম্ন ২১ শতাংশ ছিল। এখন এসব জেলায় শনাক্ত হার এসে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৫৮ ও সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর। এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকে অগ্রাহ্য করা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও টিকার প্রতি আগ্রহী না হওয়ার কারণে গ্রামে সংক্রমণ বেড়ে গেছে। করোনা শুরুর পর গত বছর নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জসহ বেশকিছু জেলা করোনার হট স্পটে রূপ নেয়। পরে সেখানে সংক্রমণ কমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু এ মাসের প্রথম থেকে সারা দেশে আবারো সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে এসব পুরনো হট স্পটসহ ১১ জেলায় সংক্রমণ আবারো বেড়ে যায়। জেলাগুলো হলো- ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, গাইবান্ধা, ভোলা, বরগুনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।