ফকির আলমগীরসহ মারা যাচ্ছেন অনেকে

দুই ডোজ টিকা নিয়েও আপনি কি নিরাপদ?

দুই ডোজ টিকা নিয়েও আপনি কি নিরাপদ?

বিশেষ প্রতিবেদক :

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষ প্রতিদিন নিচ্ছেন টিকা। উন্নত পৃথিবী এর কিছুটা সুুফলও পেয়েছে। বাংলাদেশেও টিকাদান কর্মসূচি চলছে। তবে দুই ডোজ টিকা নিয়েও এই অদৃশ্য শত্রু থেকে রক্ষা মিলছে না অনেকের। গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরও করোনা টিকার দুই ডোজই নিয়েছিলেন। করোনায় মারা গেছেন এই কণ্ঠযোদ্ধা। করোনার দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত হয়ে ষাট বছর বয়সী আনোয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়েছে। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও কেন সংক্রমণ এবং মৃত্যু তা বের করতে স্বাস্থ্য বিভাগকে গবেষণা পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে  বলেন, প্রথমে দেখতে হবে উনি দুই ডোজ টিকা কোন কোম্পানির নিয়েছেন। ভ্যাকসিন নেয়ার পর অনেক বিষয় রয়েছে। যেমন ভ্যাকসিন নেয়ার পর তার শরীরে কি পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা জানা হয়েছে কিনা। ভ্যাকসিন কার্যকর হলো কিনা। তিনি বলেন, যিনি মারা গেছেন তার শরীরে হয়তো অ্যান্টিবডি গ্রো হয়নি। এ ছাড়াও তিনি আগে থেকে কোনো জটিল রোগে ভুগছিলেন কিনা। এগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা প্রয়োজন। এজন্য ভালো পরিকল্পনা দরকার। খ্যাতিমান এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, দেশে গবেষণার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই আমাদেরকে এই দিকে গভীর নজর দিতে হবে। তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট টিকা কোম্পানিগুলো তাদের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। তাতে লেখা থাকে টিকা নেয়ার পর সংক্রমণ হবে না এমন বলা যাবে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর মৃত্যুর বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্ত করে বের করা উচিত। কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। টিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা। যিনি মারা গেছেন তার শরীরে আগ থেকে কোনো জটিল রোগ ছিল কিনা। তিনি আরও জানান, টিকা নেয়ার পর প্রতি ১০ লাখে ১ জন মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ ছাড়া অন্যদেশের এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে মিল আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে বলে এই জনস্বাস্থ্যবিদ মনে করেন।

এদিকে, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর করোনা টিকার দুই ডোজই নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই জ্বর ও খুসখুসে কাশি শুরু হয়। পরে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা পরীক্ষা করান। ফল পজেটিভ আসে। তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে প্রথমে তাকে গ্রীন রোডের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

করোনার টিকা নিয়েছিলেন ষাট বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, টিকা দিয়ে রক্ষা করা গেল না আনোয়ারাকে। গত রমজান মাসে মহাখালী সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছিলেন তিনি। টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন তাদের সন্তান আমিনুল ইসলাম বাবু। তিনিও আক্রান্ত হয়েছেন। আনোয়ারা দীর্ঘদিন থেকে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। একপর্যায়ে দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যায় তার। তিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতেন শান্তিনগরের একটি প্রতিষ্ঠানে। এরমধ্যেই গত ১৯ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন আনোয়ারা। মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। একপর্যায়ে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো আনোয়ারাকে। এরমধ্যেই শনিবার ভোরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তার। একপর্যায়ে বাসাতেই মারা যান তিনি।

করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর রোগীরা ভাইরাসে কতোটা ভুগছেন। কি সমস্যা হচ্ছে এসব বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণা তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশদ গবেষণা পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email