শিরোনাম :

  • বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইসির ভূমিকায় মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের জানাজা হবে: বিএনপি

Rizvi-2নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ইচ্ছাপূরণে নির্বাচন কমিশন “এডভান্স বুকিং প্রতিষ্ঠান’ এ পরিণত হলে মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের জানাজা পড়তে আর বেশী সময় লাগবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দফতরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
সকালে বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। দীর্ঘ দশ মাসেরও বেশী সময় ধরে কারাগারে থাকার পর সাংবাদিকদের মাঝে ফিরে আসতে পারায় অত্যন্ত আনন্দ ও উদ্দীপনাবোধ করছি বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা। কারাবাসে থাকাকালে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরেও তার প্রতি যে সহানুভুতি দেখিয়েছেন সেজন্য তিনি সাংবাদিকদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।

রিজভী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বিচারে গণগ্রেফতার চলছে। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত আটক করা হচ্ছে। এতে নির্বাচনী পরিবেশ নির্মল ও স্বচ্ছতার পরিবর্তে পুতিগন্ধময় হয়ে উঠেছে। সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি এখন বিরাজমান।

এরকম পরিস্থিতি টিকিয়ে রেখে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। তাই প্রশাসনের নাকের ডগাতেই আগামী পৌর নির্বাচনে বারোটা বাজিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিনিয়ত মন্ত্রী-এমপি’রা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, ইসি’র সতর্কতা উপেক্ষা করে মন্ত্রী এমপি’রা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ শোকজেই নিজের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকারের লাগামহীন লোভ চরিতার্থ করতে নির্বাচন কমিশন পূর্বের মতোই অনুগামীর ভূমিকা পালন করছেন।

বিগত কয়েক বছরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ব্যালট পেপার পুড়িয়ে যেভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই নির্বাচনগুলোকে বৈধতার সীল মোহরের ভূমিকা পালন করেছে এই কমিশন। তিনি বলেন, সরকারের আশীর্বাদ নিতে ও নিজেদের চাকুরিকে নিরাপদ রাখতে সিটি নির্বাচনের মতো পৌরও ‘নির্বাচন কমিশন’ একইধরণের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা অব্যাহত থাকলে মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের জানাযা পড়তে আর বেশী সময় লাগবে না।

তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সরকারের অশুভ অপকর্মের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে নিজের আত্মা ও নীতিবোধকে কলঙ্কিত হতে দেবেন না। আর যদি ক্ষমতাসীন মহলের প্রদর্শিত পথ ধরেই হাঁটেন তাহলে ইতিহাসে আপনারা ধান্দাবাজ বলেই অভিহিত হবেন।

লিখিত বক্তৃতায় রিজভী বলেন, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন সেসমস্ত বীর শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং যারা সরকারি বাহিনীর গুলিতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু, জখম, গুরুতর আহত হয়ে এখনও হাসপাতাল ও কারাগারে আটক আছেন তাদের সুস্থতা ও মুক্তি দাবি করছি।

এছাড়াও গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের দীপ্ত প্রত্যয় নিয়ে সোচ্চার কন্ঠে কথা বলতে গিয়ে যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, মোসাদ্দেক আলী, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, মো: শাহজাহান, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, যুব বিষয়ক সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, জয়পুরহাট জেলা বিএনপি’র সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী, সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, দলের সহ-সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন নিজান, সাবেক এমপি নাজিমুদ্দিন আহমেদ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট আশিফা আশরাফি পাপিয়া, রংপুর মহানগর বিএনপি’র সভাপতি মোজাফফর হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, মাহবুবুল হক নান্নু, যশোর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাবিরুল ইসলাম সাবু, ফেনী জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন, চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র আহবায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, ঝালুকাঠি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান নুপুর, ভোলা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক মিয়া, রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলন এবং কিশোরগঞ্জ বিএনপি নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরিফুল আলমসহ হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টুকে।

গণতন্ত্র পূনঃরুদ্ধারের আন্দোলনে এখনও কারান্তরীণ রয়েছেন এদেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য ৮৫ বছর বয়স্ক এম কে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়ার অধ্যাপক আবদুল মান্নান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি ডা: দেওয়ান সালাহউদ্দিন, সাভারের মেয়র রেফাতউল্লাহসহ বিগত এক বছর ধরে প্রতিদিনই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের আটক করে কারাগারে রাখা হচ্ছে।

মিথ্যা মামলায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছকে একটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে।

সময়ের সাহসী সন্তান দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে জোর করে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এছাড়াও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রতিহিংসামূলকভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি’র শীর্ষ রাজনীতিবিদসহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে এবং মিথ্যা মামলার মাধ্যমে হুলিয়া জারি ও বাড়িতে হামলা করে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে ঘর ও এলাকা ছাড়া করে রাখা হয়েছে।

বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, এখনো কারাগারে আটক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এডভোকেট আবদুস সালাম পিন্টু, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ডা: দেওয়ান সালাহউদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, বিএনপি’র নির্বাহী সদস্য হাজী মুজিব, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক ইয়াসিন আলীসহ আটককৃত বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।