শিরোনাম :

  • শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

সংলাপের জন্য সেতুমন্ত্রীর তিন পূর্বশর্ত

kader-02নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতায় বসতে তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্ধারক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

৫ জানুয়ারি রাজধানীর নয়া পল্টনের এক সমাবেশে খালেদা জিয়ার সংলাপ-সমঝোতার আহ্বানের জবাবে বুধবার এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের এ তিন শর্ত আরোপ করেন।
এর মধ্যে প্রধান শর্ত হচ্ছে-খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদযাপন বন্ধ করতে হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্যের অপর দুটি শর্ত হচ্ছে- বিএনপিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুরে কথা’ বলা বন্ধ করতে হবে এবং ‘পাকিস্তানি ভাবধারার’ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বিএনপি এই তিন শর্ত মানলে গণতন্ত্রের স্বার্থে ‘সমঝোতা ও সংলাপের’ জন্য আওয়ামী লীগ ‘রক্তাক্ত ইতিহাসসহ অনেক কিছু ভুলতে’ পারে বলেও জানান তিনি।

অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ বুধবার দুপুরেই ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন থেকে খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের কড়া সমালোচনা করে আসছে। দৃশ্যত এ কারণেই গত বছর ১৫ আগস্ট খালেদার জন্মুদিনে কেক কাটাসহ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।

মঙ্গলবার নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে অবিলম্বে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তা অনুষ্ঠানে সব দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভুলে গেলাম রক্তাক্ত ইতিহাস; ভুলেই গেলাম ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। জাতীয় স্বার্থে সেসব ঘটনাকে আমরা সমঝোতার পথে অন্তরায় হিসেবে দেখতে চাই না।’

‘১৫ আগস্টের খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন; সেটা না হয় বাদ দিলাম। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ‘প্রাইম টার্গেট’ করে আমাদের নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিলেন- সেটাও না হয় গণতন্ত্রের স্বার্থে বাদ দিলাম। আহসানউল্লাহ মাস্টারের, এএসএম কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের রক্তাক্ত স্মৃতির কথাও না হয় ভুলে গেলাম।’

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর হোসনে পল্টু, সংসদ সদস্য ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতার শর্ত তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর দিন শেখ রাসেলেরও শাহাদাৎবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিনে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনের কেক কাটা বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার কথা, গণতন্ত্রের স্বার্থে সমঝোতা চাই। কিন্তু বিএনপিকে সমঝোতার স্বার্থে পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুরে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। এই তিন বিষয়ে সমঝোতা হলে সংলাপও হবে, সমঝোতাও হবে।’

‘কিন্তু ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলকে হত্যার দিন কেক কেটে আনন্দ করবেন আর সেই মুখেই আবার সংলাপ-সমঝোতার কথা বলবেন, সেই সমঝোতা চাই না, বাঙালি জাতি চায় না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভায়োলেন্স, রক্তের রাজনীতি, পেট্রোল বোমা, ককটেল সহিংসতার রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি যদি গণতন্ত্রের স্বার্থে সমঝোতা চায়, দেশের স্বার্থে সমঝোতা আমরা মানি।’
‘আবারো বলছি, এই তিনটি বিষয়ে আগে সমঝোতা হতে হবে, তারপর সংলাপ-সমঝোতা সবকিছুই হবে।’