• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

করোনা আতঙ্কের মধ্যেই আরেক দুঃসংবাদ দিলেন বিজ্ঞানীরা!

দেশনিউজ ডেস্ক।

প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন সারা বিশ্বে মারা যাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। মানুষের জীবন ও অর্থনীতি রক্ষায় যখন বিশ্বনেতারা অস্থির, ঠিক তখনই আরেকটি দুঃসংবাদের কথা শুনালেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গলায়মান আর্কটিক অঞ্চল বিশ্বের জন্য আরো দুঃসংবাদ নিয়ে আসতে পারে। এসব অঞ্চলের নিচে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে হাজার হাজার বছরের পুরনো ভাইরাস। সেগুলো সক্রিয় হয়ে বিশ্বে ভয়াবহ সব রোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্কতা দিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, তখন তুন্দ্রা অঞ্চলের এসব ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এতে সৃষ্টি হতে পারে নতুন এক মহামারি।

এ খবর দিয়ে লন্ডনের প্রভাবশালী অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, আর্কটিক অঞ্চলে যা ঘটছে তা হতাশাজনক। গত এক পক্ষকালে সাইবেরিয়ায় ভয়াবহ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল তাপমাত্রা।

এতে তাপদাহ বয়ে যায়। এরই মধ্যে অনেক স্থানে দাবদাহে পুড়ছে। আবহাওয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড। এতে জলবায়ু পরিস্থিতিকে নাটকীয়ভাবে ভঙ্গুর অবস্থায় চলে আসছে।

আর জলবায়ু বিষয়ক বিজ্ঞানীরা বিবেচনা করছেন, এটাই হতে পারে আর্কটিক অঞ্চলের জন্য অতিমাত্রায় তাপদাহের ভয়াবহ এক যুগের সূত্রপাত। এমনিতেই করোনা ভাইরাস মহামারি সংক্রমণ বিশ্বকে ওলটপালট করে তুলেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এই ধারা। এতে পৃথিবী অতিমাত্রায় গরম হয়ে উঠছে। এতে আর্কটিক অঞ্চলে হিমায়িত অবস্থায় থাকা ভাইরাসগুলো সক্রিয় হয়ে আক্রমণ ঘটাতে পারে।

 বিজ্ঞানীদের ধারণা, এসব ভাইরাস হাজার হাজার এমনকি লাখো বছরের পুরনো। তারা আর্কটিক অঞ্চলের বরফের নিচে হিমায়িত হয়ে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু আর্কটিক অঞ্চল পৃথিবীর অন্য অংশের তুলনায় দ্বিগুন বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রথমবারের মতো এসব ভাইরাস সক্রিয় হচ্ছে। সর্বশেষ আইসএইজ বা বরফ যুগের পরে এই প্রথম এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ওইসব ভাইরাস বা প্যাথোজেন অবমুক্ত হয়ে পড়ছে, যা আধুনিক মানব সভ্যতা এর আগে কখনো মুখোমুখি হয় নি।

 
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের অনুসন্ধানী সংবাদ মাধ্যম আনআর্থেড’কে এইক্স মার্সেইলি ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট জ্যাঁ মিশেল ক্লাভেরি বলেছেন, ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তাই এ ধারণা গ্রহণযোগ্য। তবে বাকি বিতর্ক হতে পারে তারা কতদিন বাঁচে তা নিয়ে।

ব্যাকটেরিয়া কি ১০ লাখ বছর বাঁচে? ৫ লাখ বছর বাঁচে নাকি ৫০ হাজার বছর বাঁচে? এর জবাবে তিনি বলেন, এমন সব কঠিন প্রমাণপত্র রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে- হ্যাঁ। একেবারে চিরহিমায়িত অঞ্চলের গভীরে বেঁচে থাকতে পারে ব্যাকটেরিয়া এবং তারা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।

 
একই প্রতিষ্ঠানের ড. চ্যান্টাল অ্যাবারজেল বলেছেন, প্রাচীনকালের হিমায়িত নমুনা থেকে আমরা ভাইরাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। তবে ৩০ হাজার বছর আগের ভাইরাসকে আমরা এটা করতে সক্ষম হই নি। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে।
এখন পর্যন্ত গবেষকরা প্রাচীনকালের ডিএনএ ভাইরাস সক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে অধিক নশ্বর আরএনএ ভাইরাসকে সক্রিয় করতে সক্ষম হননি। স্প্যানিশ ফ্লু এবং বর্তমানের করোনা ভাইরাসের মতো রোগ সৃষ্টি করে আরএনএ ভাইরাস। ডিএনএ ভাইরাস যেসব রোগ সৃষ্টি করে তার মধ্যে রয়েছে বর্তমানে নির্মূল করে দেয়া স্মলপক্স। ব্যাকটেরিয়া থেকে আরো একটা হুমকি এসেছিল ২০১৬ সালে। সেটা হলো অ্যানথ্রাক্স, যা মেরে ফেলেছিল হাজার হাজার বল্গাহরিণকে।

 
ড. ক্লাভেরি বলেছেন, শুধু চিরহিমায়িত অঞ্চলের গলন থেকেই ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এমন নয়। একই সঙ্গে যেসব এলাকায় দীর্ঘদিন মানুষের বসতি বিরল সেখানে মানুষ ও পশুর কর্মকা- থেকেও এমন ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তিনি আরো বলেন, যখন হিমায়িত অবস্থা থেকে প্রকৃতিতে ভাইরাস অবমুক্ত হয়, তখন কি ঘটে? তিনিই উত্তর দিচ্ছেন। বলেন, তা নদীতে গিয়ে পড়ে। তা অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে যায়, যা ভাইরাসের জন্য খুব খারাপ। তারা আলোর সঙ্গে মিশে যায়। যা ভাইরাসের জন্য খারাপ। ফলে তারা যদি দ্রুত কোনো গ্রহীতাকে খুঁজে না পায় তাহলে দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না। যদি এই ভাইরাস কোনো উপযুক্ত পোষকের সংস্পর্শে আসে তখনই তা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই যেখানে হিমায়িত অবস্থায় ভাইরাস আছে, সেখানে যদি কোনো মহামারি সংক্রমিত মানুষকে রাখেন, তাহলে তিনি সংক্রমিত হবেন। তাতে নতুন এক মহামারি সৃষ্টি হতে পারে।  

ডিএন/আইএন/জেএএ/০৫:৪পিএম/০৫৭২০২০৩

Print Friendly, PDF & Email