টাইগারদের সফলতার বছর ২০১৫

01নিউজ ডেস্ক: এক যুগ আগেও টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক পরাজিত দল হিসেবে সবার আগে আসতো বাংলাদেশের নাম। এ ধারাবহিকতাটির মধ্যে তারা ঘুরপাক খেয়েছে তিন বছর আগেও। ২০০০ সালের শুরুর দিকেও ওয়ানডে দল হিসেবে বাংলাদেশকে দেখা হতো তথাকথিতদের তালিকায়।

কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই। বিশ্বের যে কোন দল এখন বাংলাদেশের মুখোমুখি হবার আগে তিনবার ভেবে দেখে। পরখ করে নেয় প্রস্তুতি সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা। ক্রমেই টাইগাররা হয়ে উঠেছে জায়ান্ট কিলার। যদিও ধারবাহিক সফলতা এখনো পেতে শুরু করেনি এশিয়ার এই ক্রিকেট পাওয়ার হাউজ। সেই অর্থে টাইগার দলের জন্য সেরা সফলতাটি বয়ে এনেছে ২০১৫ সাল।

নাটকীয়ভাবেই যেন পাল্টে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের চেহারা। যে সফলতার কারণে এখন টাইগারদের আর কেউ ‘আন্ডার ডগ’ হিসেবে বিবেচনা করতে সাহস পায় না। আর এই বদলে যাওয়ার পেছনে আছে কমবেশি সবার অবদান। তবে যার কথা আলাদা করে বলতেই হবে তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। যার সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে একটি সাধারণ দল থেকে অসাধারণ হয়ে উঠছে টাইগাররা।
সেই ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়টি ক্রমেই রাঙ্গিয়ে দিতে থাকে টাইগারদের। সুযোগ পেলেই তারা বড় টুর্ণামেন্টে শীর্ষ র‌্যাংকধারী দলগুলোকে হারাতে শুরু করে। তবে জয়ের ধারাবাহিকতায় সত্যিকার অর্থে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। যেটি অর্জিত হয়েছে ২০১৫ সালে এসে।

সেই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে সফলতার হাত ধরে টাইগাররা একেবারেই বদলে ফেলে নিজেদের ব্যর্থতার চেহারাটি। এসময় ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশক’টি শক্তিশালী দেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে জয়লাভ করে টাইগার দল।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের জয় পাওয়াটি ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু ওই আসরে টাইগাররা যে কাজটি করেছে, তা হল বিশ্ব ক্রিকেটের কুলিন হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ডকে পরাজিত করা। শুধু তাই নয় ইংলিশদের হারিয়ে টুর্ণামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করেছে মাশরাফি বাহিনী। বিনিময়ে তারা লাভ করে নকআউট পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ। প্রথমবারের মত বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত এক লড়াইয়ে হার মানতে বাধ্য হয় এশিয়ার এই নবাগত শক্তি।

বিশ্বকাপ শেষ করার পরপরই বাংলাদেশ আয়োজন করে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত পরিসরের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। যেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল তিনটি ওডিআই, দু’টি টেস্ট ও একটি টি-২০ ম্যাচ। সেখানেও বিস্ময় জাগানো সফলতা অব্যাহত রাখে স্বাগতিক টাইগার দল। তারা ৩-০ ব্যবধানে ওডিআই সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করার পর জিতে নেয় একমাত্র টি২০ ম্যাচও। তবে সফরকারী পাকিস্তান ১-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি।

পাকিস্তানিদের বিপক্ষে সিরিজে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখে সফলতা পাবার পর শক্তিশালী ভারতীয়দের বিপক্ষেও সেটি ধরে রেখে সবাইকে মুগ্ধ করেছে টাইগাররা। তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজটি স্বাগতিক বাংলাদেশ জয় করে ২-১ ব্যবধানে। যার ফলে বিশ্বকাপে হারের মধুর প্রতিশোধটিও পেয়ে যায় টাইগাররা।
ফলে হোম সিরিজে জয় পাওয়াটা অভ্যাশে পরিণত হয় টাইগার দলের। যদিও আরো একটি বিস্ময় তখনো বাকী ছিল। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে আতিথেয়তা গ্রহন করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সফরকারী প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তারা ফের ওডিআই সিরিজ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে। সবশেষে বাংলাদেশ তাদের আন্তর্জাতিক বছরটি শেষ করে ৫ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার মাধ্যমে।

অসাধারণ এই সফলতার পর এখন বিশ্বের যে কোন দলের সামনেই হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে টাইগার দল। আর দলের এই সফলতায় উজ্জীবিত টাইগার সমর্থকরাও। তারা এখন বাংলাদেশ দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের সুযোগটি দারুণভাবে উপভোগ করার জন্য মুখিয়ে আছে। কারণ ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শুধুমাত্র বিশ্বের শীর্ষ র‌্যাংকধারী আটটি দল খেলার সুযোগ পাচ্ছে।

মোহাম্মদ আশরাফুল, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাহমুদ, অলক কাপালীসহ আগের প্রজন্মের ক্রিকেটেররা বাংলাদেশ দলের জন্য যে একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেছেন তার সুফল ভোগ করছে বর্তমান প্রজন্মের বাংলাদেশ। তাদের হাত ধরেই এখন টাইগার দলে যুক্ত হয়েছে মেধাবী ক্রিকেটাররা। যারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দলের জন্য গড়ে যাবেন গর্ব করার মতো আরো মজবুত ভিত্তি।

শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান সহ একদল মেধাবী তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে গঠিত বর্তমান টাইগার দলটি আরো সফলতার জন্য মুখিয়ে আছে। তারা এখন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে যে কোন ফর্মেটের ক্রিকেটেই প্রথমবারের মত আইসিসি ট্রফি জয় করতে বাংলাদেশ দলের হয়তো খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।

টাইগার দলের জন্য প্রত্যাশার এই পালে হাওয়া দিচ্ছে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও সৌম্য সরকারের মত তরুন তুর্কীরা। শীর্ষ পর্যায়ে দলীয় ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে আগামীতে তাদেরকেই আসল ভুমিকা পালন করতে হবে।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যটি হতে পারে টাইগার দলের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। এ সময় তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীর এই সুখের মুহূর্তে আমি কিভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করব, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’ টাইগাররা বর্তমানে যে ফর্মে রয়েছে তাতে হয়তো অচিরেই প্রধানমন্ত্রীর এমন আরেকটি বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সে দিন হয়তো খুব দূরে নয়। সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email