আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
সেলিম ওসমানের পক্ষ ছাড়ছে হেফাজত!
নিজস্ব প্রতিবেদক, দেশনিউজ.নেট: ইসলামকে কটূক্তি করার অভিযোগে শিক্ষককে অপদস্থ করার ঘটনায় স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষ নেয়া হেফাজত নেতারা এবার অন্য সুরে কথা বলছেন। ঘটনার সাত দিন পর ২০ মে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। সেখান থেকেই সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। সেলিম ওসমানের পক্ষে স্লোগানও দেন হেফাজত নেতারা।
কিন্তু দুদিন পরেই সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন নেতারা। এর পরিবর্তে ওই ঘটনায় সরকারকে পুনরায় তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’ ব্যানারে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল আউয়াল সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান। যিনি একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় নারায়ণগঞ্জের তৌহদি জনতা আস্তে আস্তে ফুঁসে ওঠে। নারায়ণগঞ্জের পরবর্তী অবস্থা কী হবে তা বলা বাহুল্য। ইতোপূর্বেও ধর্ম অবমাননা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ রাসুল এবং ধর্ম নিয়ে অবমাননা করেই যাচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি সামাল দেয়া এবং মুসলমানদের ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় ঠাণ্ডা করতে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্যামল কান্তি ভক্তের আল্লাহ এবং মুসলমান সম্পর্কে কটূক্তির বিষয়টি পুনরায় তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের জনতার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
অথচ গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে ‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’র ব্যানারে ওই সমাবেশ থেকে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় হেফাজত। সভাপতির বক্তব্যে আবদুল আউয়াল বলেন, ‘৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষকের শাস্তি, সঙ্গে তার পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ না করেলও নারায়ণগঞ্জ থেকে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে, দেশকে অচল করে দেয়া হবে।’
এর আগে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমানের প্রশংসা করে ফেসবুকে ভিডিও প্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম। ভিডিওটিতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী শ্যামল কান্তির কঠোর শাস্তির দাবি এবং সেলিম ওসমানের অবস্থানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন।
জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের জনগণ উত্তেজিত হয়ে তার ওপর (শিক্ষক) হামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে, তখন সেই এলাকার এমপি সেলিম ওসমান সাহেব উত্তেজনা থামানোর জন্য, জনগণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে (শিক্ষক) কান ধরিয়েছেন। এরপর কিছু ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়া এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ওই মাস্টারের পক্ষ নিয়েছে। সেলিম ওসমানকে আমি ব্যক্তিগতভাবে না জানলেও তার এই পদক্ষেপের প্রশংসা করি। কারণ আল্লাহকে শুধু মুসলমান নয়, সমস্ত মানুষ মানে, সবাই শ্রদ্ধাশীল। এই অবস্থায় এই হিন্দু মাস্টার আল্লাহকে কটাক্ষ করে কোটি কোটি মুসলমানসহ সমস্ত মানুষের অন্তরে আঘাত হেনেছেন। সুতরাং এমপি সাহেব যে তার কান ধরাইছেন, এটা কোনো এমপির অপরাধ নয়।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যান্দির পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দেয়ার পর কান ধরে উঠবস করানো হয়। আর এ কাজে নারায়ণগঞ্জ-৪ (শহর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান সরাসরি মদদ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই শিক্ষক বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এই ঘটনার পর একজন শিক্ষককে অপদস্থ করার প্রতিবাদে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। দেশে বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-শিক্ষক ও তরুণরা নিজেদের কান ধরে প্রতীকী প্রতিবাদ জানায়।