স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয়হীনতা, পেশাদারির অভাব ও নিয়ন্ত্রণহীনতা

করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এর দ্রুত বিস্তার অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যাপক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও। অনেক দেশ অনেক বেশি সফলতার সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারলেও বাংলাদেশ তা করতে পারছে না। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয়হীনতা, পেশাদারির অভাব ও নিয়ন্ত্রণহীনতা শুধু করোনার চিকিৎসা নয়, সামগ্রিকভাবে চিকিৎসাসেবাকে হুমকির মুখোমুখি করে তুলেছে। করোনা নয়, সাধারণ সর্দি-কাশি থাকলেও অনেক হাসপাতাল, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। মুমূর্ষু রোগীদের প্রতিও কোনো অনুকম্পা দেখানো হয় না। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই পরিস্থিতিতে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে কিংবা অনেক রোগী এ হাসপাতাল, সে হাসপাতাল করতে করতে কোথাও চিকিৎসা না পেয়ে পথেই মারা যাচ্ছে। কোনো একটি দেশের জন্য এর চেয়ে দুঃখজনক পরিস্থিতি আর কী হতে পারে? এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবসানে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

চীনে প্রথম করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়। এরপর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসের বিস্তার দ্রুত ঘটতে থাকে। তিনটি দেশই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও আমরা তার বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের হার। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায়ও দেখা যাচ্ছে সমন্বয়হীনতা। লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে করোনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে গেলেও মিলছে না চিকিৎসা। বলা হয় কভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার সনদ থাকতে হবে। আবার কভিড-১৯ টেস্টের জন্য ভোর ৪টায় লাইন ধরেও অনেকে পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হচ্ছে। একই ধরনের সনদ বিড়ম্বনায় ভুগছে অন্য রোগীরাও। তাদের বলা হয় করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার সনদ আনার জন্য।

যেখানে ভোররাতে লাইন ধরেও পরীক্ষা করানো যায় না, সেখানে গুরুতর সব রোগী ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে পরীক্ষা করিয়ে সনদ নেবে কিভাবে? তাহলে কি এসব রোগী কোথাও চিকিৎসা পাবে না? তারা কি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? কোনো সভ্য দেশে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই মনে করছেন, রোগীদের স্বার্থে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর এমন স্বেচ্ছাচারিতার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কঠোর ভূমিকা চান তাঁরা। কিন্তু প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চিকিৎসায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের সংঘবদ্ধতার কাছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো রীতিমতো অসহায়।

জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এখানে পেশাজীবীদের নয়, রোগীদের স্বার্থ দেখতে হবে সবার আগে। আমরা চাই, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বর্তমানে যে নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে, দ্রুত তার অবসান হোক।

Print Friendly, PDF & Email